ত্রৈলোক্যতারিনীকে নিয়ে আমাদের ভিডিও দেখুন
আর্টিকেল পড়ুন
বর্ধমানের এক অজ পাড়া গাঁ থেকে কলকাতার সোনাগাছি পতিতাপল্লী। মাঝখানে এক পৌঢ়ের সঙ্গে বিয়ে, জনৈক অজ্ঞাতনামা যুবকের সঙ্গে গভীর প্রেম আর অপরাধজীবনের সঙ্গী কালীবাবু। এসব মিলিয়েই গ্রামের সাধারণ একটা মেয়ে থেকে সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠা ত্রৈলোক্যতারিণির গল্প। ব্রিটিশশাসিত ভারতের তৎকালীন কলকাতায় নারী ‘জ্যাক দ্য রিপার’হয়ে ওঠে বহুল আলোচিত এই যৌনকর্মী।
ইতিহাসের বিচারে কুখ্যাত জ্যাক দ্য রিপারেরও আট বছর আগে তার উত্থান। শুধুমাত্র জীবনধারণের প্রয়োজনে কিংবা একটু সমৃদ্ধির আশায় কলকাতায় একের পর এক তরুণীকে খুন করেছে এই ত্রৈলোক্যতারিণী। অন্য কোনো উদ্দেশ্য, বিকৃত যৌনতা, স্যাডিজম, কিংবা পূর্বশত্রুতা নয়; নিছক ভিক্টিমের শরীরে থাকা গয়না লুটের অভিপ্রায়ে সে এই খুনগুলো করেছে।
সিরিয়াল কিলার ত্রৈলোক্যতারিণী এই ধারাবাহিক খুনের পাশাপাশি সিদ্ধহস্ত ছিল নানামুখী কুকর্ম আর অপরাধেও। তবে একেবারে ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং তাকে বার বার বাঁচিয়ে দিয়েছে সব ধরনের শাস্তি থেকে। সব অপরাধ থেকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় তার যে বরাবরের ধারাবাহিকতা, সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ান দারোগা প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি ‘দারোগার দপ্তর’ শীর্ষক ধারবাহিক রচনার ১৪৬ তম সংখ্যায় ‘পাহাড়ে মেয়ে’ নামে যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেখানেই জানা গিয়েছে বিস্তারিত।
প্রিয়নাথ সরাসরি ফিল্ড ইনভেস্টিগেশনে সফল হয়েছেন। তার কারণেই শাস্তির সম্মুখীন করা গিয়েছিল ত্রৈলোক্যতারিণীকে। আর তিনি হাতে কলম তুলে নিয়েছিলেন বলেই ইতিহাসের অংশ হয়েছে সেই কাহিনী।
নগর হিসেবে কলকতার পত্তনের পর সেটি দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ষণ্ডাপাণ্ডাসহ অন্য সব দখলদার ইউরোপীয়দের জন্য বরাদ্দ অংশের নাম ছিল তখন ‘সাদা শহর’ তথা ‘হোয়াইট টাউন। এর বাইরে তাদের দেশীয় দালাল, চামচা আর সাঙ্গোপাঙ্গদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল ‘কালো শহর’ তথা ‘ব্ল্যাক টাউন। এই দুই এলাকার মধ্যে ছিল আকাশপাতাল ফারাক।
ভারতে দখলদারিত্ব নিশ্চিত করার পর ব্রিটিশরা সেখানে নিজেদের জন্য স্বর্গসম বসতি গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছে। তাই কলকাতার সাদা শহর তথা ‘হোয়াইট টাউন’ পুরোপুরি নিরাপদ এবং সবরকম অপরাধ থেকে মুক্ত রাখা হয়েছিল। এর বিপরীতে ‘ব্ল্যাক টাউন’ হয়ে ওঠে সব ‘আকাম-কুকামের’ স্বর্গভূমি।
ইংরেজদের তাবেদারি করে নানাভাবে প্রচুর অর্থ আয় করা মানুষগুলোর মানসিক বিকাশ অতটা সুস্থ ছিল না। তারা অন্যায় পথে আয় করা অর্থ অপকর্মের পেছনেই ব্যায় করতো। তাই নেশাদ্রব্য বিক্রি, পতিতালয়ে গমন, খুন-জখম আর অপহরণের ঘটনা ছিল ‘ব্ল্যাক টাউনের নিত্যসঙ্গী’। খুব সম্ভবত এই অপরাধ আর কুকর্মের স্বর্গকে নিজেদের সুযোগ হিসেবে মনে করেছিল ত্রৈলোক্যতারিণী।
কলকাতার ‘ব্ল্যাক টাউন’ অংশে স্বভাবতই অপরাধের হার ছিল অনেক বেশি। পুলিশের অনেক কর্মকর্তা তাদের দমন করতে গিয়ে যারপরনাই ব্যর্থ হন। তাদের কেউ কেউ প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরে খুশি হন। এমন পরিস্থিতিতে পুরো এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব বর্তায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের নির্দিষ্ট কিছু কুশলী কর্মকর্তার উপর।
কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম সাহসী, সক্ষম আর কুশলী মনে করা হয় প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়কে। তিনি ১৮৭৮-১৯১১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় কলকাতা পুলিশে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। আর সে সময় অপরাধের স্বর্গভূমি ‘ব্ল্যাক টাউন’কে মানুষের বাসযোগ্য করার দায়িত্ব বর্তায় তার উপরেই।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা প্রিয়নাথ একের পর এক নানা কেস সলভ করেছেন। পাশাপাশি কলম হাতে তুলে নিয়েছেন এগুলোর বর্ণনা লিখে রাখতে। তিনি তার তিন দশকের কর্মজীবনে দেখা অনেক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবেই। তার করা অনেকগুলো অনুসন্ধানের রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা আমরা পাই ‘দারোগার দপ্তর’ পত্রিকায়।
তৎকালীন বাংলায় প্রাথমিকভাবে অপরাধ বিষয়ক পত্রিকা বা ক্রাইম ম্যাগাজিন শুরু করেন এই দারোগা প্রিয়নাথ নিজেই। পর পর কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হলেও কাজের চাপে সেই ধারাবাহিক চালিয়ে নিতে পারেননি প্রিয়নাথ। ফলে কয়েকটি বছর পুরোপুরি প্রকাশনা বন্ধ থেকে পত্রিকাটি চলে যায় বিস্মৃতির অতল তলে।
দীর্ঘশ্রমে প্রকাশিত ‘দারোগার দপ্তর’ হারিয়ে যেতে দেননি প্রিয়নাথ। তিনি পরে একেই বই হিসেবে প্রকাশ করেন। আর তখন নতুন করে প্রচারের আলোয় আসে ‘দারোগার দপ্তর’। এখানে তার সমাধানকৃত কেসগুলোর পাশাপাশি ব্যর্থতার নানা গল্পও যুক্ত করেন তিনি।
দারোগা প্রিয়নাথের লেখনী অনুযায়ী, তার দেখা ভয়ঙ্করতম অপরাধীদের মধ্যে একজন ছিল বাংলার প্রথম নারী সিরিয়াল কিলার ত্রৈলোক্যতারিণী। সুযোগ কাজে লাগিয়ে একাধিক খুন ও লুটপাটের পরেও লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা ত্রৈলোক্যতারিণীকে অবশেষে গ্রেফতার করতে পারেন প্রিয়নাথ।
তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী,
রাজকুমারীনাম্নী একটি চরিত্রহীনা স্ত্রীলোককে হত্যা করার অপরাধে ত্রৈলোক্যনাম্নী অপর আরেকটা স্ত্রীলোক চরমদণ্ডে দণ্ডিত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধানে আমি নিযুক্ত হইবার পূর্ব্বে ইহার বিপক্ষে আমি আরও একটু অনুসন্ধান করিয়াছিলাম। সুতরাং ইহার পূর্ব্ববৃত্তান্ত আমি বিস্তর অবগত হইতে পারিয়াছিলাম। তথাপি ইহার জীবনচরিত বিশদরূপে জানিবার নিমিত্ত চরমদণ্ডের আদেশের পর আমি একদিবস কারাগারে গমন করি।
এরপর তিনি সরাসরি তাকে প্রশ্ন করে কীভাবে সব তথ্য উদ্ধার করেছেন তার বিশদ বর্ণনা পাওয়া গিয়েছে তার লেখায়।
আমার কথা শ্রবণ করিয়া ত্রৈলোক্য কহিল, “মহাশয়! আমি আমার জীবনের যৌবনাবস্থা হইতে আরম্ভ করিয়া, দিন দিন যেরূপ রাশি রাশি পাপ উপার্জ্জন করিয়াছি, তাহার উপযুক্ত দণ্ড আমি প্রাপ্ত হই নাই! এখন আমি জানিতে পারিলাম, ইংরাজ রাজত্বে ভয়ানক পাপীর উপযুক্ত দণ্ড বিধান হয় না। ইংরাজ আইনে মহাপাপীর মহাদণ্ডের বিধান নাই!
এবার একটু ত্রৈলোক্যতারিণীর জীবনের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। জীবনের শুরুতে এক বুড়ো দামড়ার ঘরণী হওয়াকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি সে। আর তাই স্বামীর সঙ্গে সংসার করেনি সে। একাধিক স্ত্রীর এই আধবুড়ো স্বামীও ত্রৈলোক্যতারিণীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাননি। সতীনদের সঙ্গে সংসার করার ইচ্ছে ছিল না তারও। প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন,
স্বামীর মুখ দেখিয়াই হৃদয় জ্বলিয়া উঠিল। বহুদিবস হইতে সঞ্চিত পরিণয়ের সুখ-পিপাসা মিটিয়া গেল! কিন্তু পিতা-মাতা বা অপর গুরুজনের মধ্যে কাহারও নিকট আপন মনের কথা প্রকাশ করিতে পারিলাম না। হৃদয়ের ভিতর মুখ লুকাইয়া কেবল কাঁদিয়া কাঁদিয়াই দিন অতিবাহিত করিতে লাগিলাম।
আমার স্বামী কেবল যে বৃদ্ধ, তাহা নহেন। তিনি আরও দশ-বারটি বনিতার স্বামী। এইরূপ অবস্থা দেখিয়া, পিতা যে কীরূপে আমার সহিত তাহার বিবাহ দিলেন, তাহা ভাবিয়া চিন্তিয়া আমি কিছুই স্থির করিয়া উঠিতে পারিলাম না। বিবাহ-ব্যবসায়জীবী স্বামী আমার বিবাহের পূর্ব্বেই তাহার পাওনাগণ্ডা বুঝিয়া লইয়াছিলেন।
গ্রামের বাড়িতে দীর্ঘ সময় পার করে তার পরিচয় হয় জনৈক বৈষ্ণবী ‘তারাদিদির’ সঙ্গে। পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সী এই নারী আপন করে নেয় কুলীন ব্রাহ্মণের একসময়ের সুন্দরী মেয়ে, তারপর সদ্য বিধবা হওয়া ত্রৈলোক্যতারিণীকে। তারাদিদির হাত ধরে ত্রৈলোক্যতারিণীর পরিচয় ঘটে জনৈক যুবকের সঙ্গে। আর সেই প্রসঙ্গে ত্রৈলোক্যতারিণীর জবানিতে দারোগার দপ্তর বলছে,
জীবনের অন্য অধ্যায়ে প্রবেশ করিবামাত্রই আমার মনের গতি পৃথক হইয়া গেল। তারাদিদিকে যেরূপ ভালবাসিতাম, তখন ‘আর একজনকে’ তাহা অপেক্ষা আরও ভালবাসিতে লাগিলাম। তারাদিদিকে কিয়ৎক্ষণ না দেখিতে পাইলে, মনের মধ্যে যেরূপ কষ্ট হইত, তখন আবার সেই ‘আর একজনকে’ না দেখিতে পাইলে হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যাইতে লাগিল।
সেই তারাদিদির মৃত্যুর পর ঐ যুবকের হাত ধরে গ্রাম ছেড়ে কলকাতা পৌঁছল ত্রৈলোক্যতারিণী। সুন্দর, সাজানো-গোছানো সংসার করার বদলে সোনাগাছির নিষিদ্ধপল্লিতে ঠাঁই মেলে তার। গ্রাম থেকে কলকাতায় পা রাখা মেয়েটি তখন জানতও না ওই এলাকার কী হয়। অল্পদিনে বুঝতে পারার পর পেছনে ফিরে দেখে- ঘরে ফেরার সব পথ অচেনা হয়ে গেছে। জীবনের টানাপোড়েনে সে অভ্যস্ত হতে থাকে পতিতাপল্লী সোনাগাছির জঘন্য সব নিয়ম আর রীতিনীতিতে।
অপরাধজগতে টেনে আনা প্রেমিকের সঙ্গও বেশি দিন পায়নি ক্রমশ মক্ষীরানি হয়ে উঠতে থাকা ত্রৈলোক্যতারিণী। অল্পদিনের মধ্যে ঐ যুবকের মৃত্যু তার জীবনে নিয়ে আসে কালীবাবুকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যসব বারবণিতার মতো কমতে থাকে ত্রৈলোক্যতারিণীর চাহিদাও। তবে এই ভয়ানক অসময়েও তার পাশে ছিল কালীবাবু। তার এই আস্থার প্রতিদান দিয়ে বউ মরার পর লোকটির একমাত্র ছেলেকে মাতৃস্নেহে লালন করতে থাকে ত্রৈলোক্যতারিণী।
সংসারের অভাব আর টানাপোড়েন সুপথে ফিরতে দেয়নি ত্রৈলোক্যতারিণীকে। কালীবাবু তাদের হয়ে শিকার ধরত। নাম, পরিচয় আর ঠিকানা বদল করে সাজানো পাত্রীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হতো শহরের বড়লোক কোনো ছেলেকে। তারপর পাত্রীর সঙ্গে তার সাজানো আত্মীয়স্বজন গিয়ে তাদের বাড়িতে লুটপাট করে পালিয়ে যেত।
এরপর কলকাতার রাস্তা থেকে শিশুকন্যাদের অপহরণ শুরু করে তারা। বিয়েতে কন্যাপণ দেওয়ার অসুস্থ রীতি তাদের সুযোগ করে দেয়। তারা অপহৃত বালিকাদের বিক্রি করেও অনেক টাকা কামিয়েছে। কিন্ত ত্রৈলোক্যতারিণীর টিকিটাও ছুঁতে পারেনি পুলিশ।
নানা অসতর্কতার পরেও বিপদ যথাসময়ে উপস্থিত। কালীবাবু আর ত্রৈলোক্যতারিণী এবার ধরা পড়ে। গয়নার লোভে রাজ-এস্টেটের কর্মচারীকে খুন করলে সেই মামলার বিচারে কালীর প্রাণদণ্ড হয়। প্রমাণের অভাবে এবার ছাড়া পেয়ে যায় ত্রৈলোক্যতারিণী। অন্ধকারের পথ থেকে সরে আসার সংকল্পে পালিত সন্তানকে নিয়ে সোনাগাছি ছেড়ে থাকতে শুরু করে অন্য এলাকায়। তবে দারিদ্র্য তাকে ভাল হতে দেয়নি।
অর্থের সহজ যোগান হিসেবে অপেক্ষাকৃত ধনী আর লোভী পতিতাদের টার্গেট করে সে। খদ্দের ধরিয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ত্রৈলোক্যতারিণী এসব পতিতাকে নিয়ে যেত কলকাতার একটি বাগানবাড়িতে। বাগানবাড়ির পুকুরে স্নান করতে নামিয়ে সেখানে চুবিয়ে মেরে ফেলতো তাদের। তিন বছরে পাঁচজনকে খুন করলেও প্রমাণের অভাবে কেউ তাকে ধরতে পারেনি। একের পর এক মৃতদেহ পেয়ে সতর্ক হয়ে ওঠা পুলিশের কাছে অবশেষে সে ধরা পড়ে যায় ষষ্ঠবারে।
পানিতে চুবিয়ে খুন করার সময় সেই পরিত্যক্ত বাগানবাড়িতে ঢুকে পড়ে এক লোক। প্রমাণের অভাবে ত্রৈলোক্যতারিনী ছাড়া পেয়ে গেলেও তাকে পালাতে হয় সোনাগাছির পুরনো পাড়া থেকে। পালিত ছেলে হরিকে নিয়ে চিৎপুরের পাঁচু ধোপানি লেনের এক বাড়িতে উঠেছিল সে। সরাসরি রেড লাইট এলাকা না হলেও ওই বাড়ির বাসিন্দারাও জড়িত ছিল দেহব্যবসার সঙ্গে। সেখানে থাকা অবস্থায় সে খুন করে ঐ বাড়িরই এক ভাড়াটে তরুণীকে। গয়না হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে খাবারে মাদকদ্রব্য মিশিয়ে অচেতন করে ওই তরুণীকে। তারপর তাকে গলাটিপে মেরে ফেলে সে।
ঘটনাস্থলে হাজির কুশলী দারোগা প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি আগে খুনী ত্রৈলোক্যকে হাতের কাছে পেয়েও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে। আইনের ফাঁক গলে তার বেরিয়ে যাওয়া ঠেকাতে পাঁচু ধোপানির গলির হত্যাকাণ্ডে তিনি একটু অন্য বুদ্ধি আঁটলেন। তিনি ইচ্ছে করেই গ্রেফতারের পর মুক্তি দিয়ে দেন ত্রৈলোক্যতারিণীকে। তবে গ্রেফতার করেন তার পালিত ছেলে হরিকে। ওদিকে রাজসাক্ষী করা হয় ত্রৈলোক্যতারিণীর সঙ্গে হত্যায় যুক্ত থাকা সেই ভাড়াটিয়াকে। তিনি প্রকাশ্যে মামলা সাজাতে থাকেন ত্রৈলোক্যতারিণীর পালিত ছেলে হরিকে খুনী প্রমাণ করে।
প্রিয়নাথের সাজানো ফাঁদে ধরা দিতে বাধ্য হয় ত্রৈলোক্যতারিণী। সে তার পালিত ছেলেকে বাঁচাতেই সব অপরাধ স্বীকার করে। এমনকি, নিজ কক্ষে লুকোনো জায়গা থেকে বের করে আনে খুনের পরে লুট করা গহনাগুলো। এরপর তার ফাঁসির রায় হয়। বলতে গেলে সিরিয়াল কিলিং মিশনে এটাই শেষ কুকর্ম।
কলকাতা পুলিশের নথি বিচারে বাংলার ইতিহাসে সে-ই প্রথম নারী সিরিয়াল কিলার। দেখতে দেখতে বারোটি দশক কেটে গিয়েছে। ভয়াবহ সেসব হত্যাকাণ্ডের কাহিনীগুলো পড়তে গিয়ে এখনও শিউরে ওঠেন অনেকে।