ভালদারোর অমীমাংসিত মৃত্যুরহস্য জানতে দেখুন আমাদের ভিডিও
আর্টিকেল পড়ুন
আচ্ছা, আপনারা কি ভালদারোর প্রেমিক-প্রেমিকার কাহিনি জানেন? গল্প না কিন্তু, সত্য ঘটনা। চলুন, আপনাদের প্রায় ৫,০০০ বছর আগে থেকে ঘুরিয়ে আনা যাক।
প্রথমেই এই কঙ্কাল-যুগলকে দেখুন। একে অপরকে জড়িয়ে রেখেছে তারা। আজ থেকে এক যুগেরও বেশি সময় আগে, ২০০৭ সালে, যখন ইতালির মান্তুয়া শহরের নিকটবর্তী ভাল্দার্দো গ্রামে তাদের খুঁজে পাওয়া গেল, তখন আশ্চর্য হয়েছিল এলিনা মারিয়া মেনোত্তির নেতৃত্বাধীন সেই দলের সকলেই।
দুজনের এই অন্তিম আলিঙ্গনকে সম্মান জানিয়ে কঙ্কাল দুটোকে আর আলাদা করা হয়নি, বরং সেখানকার মাটিসহই নিয়ে আসা হয়, পরবর্তীতে যাদের ঠাই মেলে মান্তুয়ার ন্যাশনাল আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ামের এক কাচের বাক্সে।
পরবর্তী গবেষণায় জানা যায়, আলিঙ্গনরত এই দুজন আসলে তরুণ-তরুণী, মৃত্যুর সময় যাদের বয়স ছিল ১৮-২০ বছরের মাঝে। ৫,০০০-৪,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝে কোনো একসময় মৃত্যু হয় তাদের। দুজনেরই উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ২ ইঞ্চির মতো।
যেসময় তাদের মৃত্যু ঘটে, সেসময় দুজন মৃত ব্যক্তিকে একসাথে কবর দেয়ার ঘটনা ছিল বেশ বিরল। ফলে আবিষ্কারের পর এই দুজনকে নিয়ে রোমান্টিক নানা কেচ্ছাকাহিনি ছড়াতেও খুব বেশি সময় লাগেনি।
এর মাঝে একটি হলো- তীব্র শীতের রাতে ঘরের বাইরে থেকে এই দুই তরুণ-তরুণী যখন বুঝতে পারে যে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, তখনই তারা পরস্পর আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে শেষ সময়টুকু কাটাবার সিদ্ধান্ত নেয়, যার ফলাফল দেখতে পাচ্ছি আমরা এখন।
অনেকে আবার মনে করেন, তারা হলো হাজার হাজার বছর আগেকার রোমিও-জুলিয়েট যারা কোনো না কোনো কারণে আত্মহত্যা করেছিল। তবে এই দাবির পক্ষেও কোনো প্রমাণ নেই, আছে কেবলই অনুমান। আর এই অনুমানও পরবর্তীতে গবেষণার মাধ্যমে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আত্মহত্যার মাধ্যমে তারা নিজেদের শেষ করে দিয়েছে- প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা থেকে এর কোনো প্রমাণ মেলেনি।
এলিনা মারিয়া মেনোত্তি অনুমান করেছিলেন, শুরুতে হয়তো তরুণের মৃত্যু হয়েছিল। পরবর্তীতে তার সঙ্গী এই তরুণীকে বলি দেয়া হয়, যাতে পরকালে তারা একত্রে থাকতে পারে। তবে মেনোত্তির এই অনুমানও পরবর্তীতে ভুল প্রমাণিত হয়। কীভাবে?
ছেলেটির গলার কাছে একটি তীরের অগ্রভাগ খুঁজে পাওয়া যায়। ওদিকে মেয়েটির উরুর কাছে একটি ব্লেড, এবং কোমরের নিম্নভাগে দুটো ছুরি দেখে প্রথমে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ ভেবেছিলেন, হয়তো নৃশংস কোনো হত্যাকাণ্ডের শিকারই হতে হয়েছে দুজনকে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের দেহে কোনো আঘাতের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি দেখে ধারণা করা হয়- এই অস্ত্রগুলো মৃত্যুর পর তাদের সাথে দিয়েই মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল।
গবেষকদের অনুমান, প্রায় ৫,০০০ বছর আগে মান্তুয়ার চারদিকে ছিল জলাভূমি, ছিল নদীর প্রাচুর্য। ফলে পরিবেশটাই এমন ছিল যে এতদিন পর এসেও তাদের কঙ্কাল বেশ চমৎকারভাবেই সংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
কিন্তু তাদের কীভাবে মৃত্যু হলো সেই রহস্য? ওটার কি কোনো সমাধান মিলেছে? না, ওটা এখনও অমীমাংসিত এক রহস্যই রয়ে গেছে। যার কোনো কূলকিনারা সম্ভবত কখনও পাওয়াও যাবে না।
প্রতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ইতালিতে আসা পর্যটকদের অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে নিওলিথিক যুগের এই রোমান্টিক কাপলকে দেখবার। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো মান্তুয়ার আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ামের প্রবেশপথের কাছে তাদের প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
পরবর্তীতে ‘Lovers of Valdaro’ অ্যাসোসিয়েশনের দাবির মুখে তাদের জন্য আলাদা এক রুমের ব্যবস্থাই করা হয়। সেখানেই শক্ত কাচের আড়ালে এখন আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে ভালদারোর প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি, যাদের কঙ্কালের এই বিশেষ অবস্থান ও মৃত্যুরহস্যই বিশ্বজুড়ে তাদের জনপ্রিয়তার মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।