বড়লাট লর্ড মেয়োর হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমাদের ভিডিও দেখুন
আর্টিকেল পড়ুন
কাহিনিটা অনেকটাই থ্রিলার মুভির মতো। কারণ, দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি খুন করেছেন ভারতে দায়িত্বরত ভাইসরয় তথা বড় লাটকে! তবে হ্যাঁ, রূপকথা হলেও সত্যি। বিপ্লবী শের আলী আফ্রিদীর হাতে আন্দামান নিকোবরের বন্দীশালায় বেড়াতে গিয়ে খুন হন তৎকালীন বড়লাট লর্ড মেয়ো।
আন্দামানের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারে ‘গ্লাসগো’ নামক রণতরীটি ঘাটে ভিড়ল। লর্ড মেয়ো রণতরী থেকে বেরিয়ে ঘুরে আসতে চাইলেন জল-জঙ্গলে ঘেরা আন্দামানের বিচিত্র সব পাহাড়-পর্বত। পড়ন্ত বিকেল। হ্যারিয়ট দ্বীপের সানসেট পয়েন্টে সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে।
মেয়ো কি ঘুণাক্ষরেও জানতে পেরেছিলেন একটু পরে কি ঘটবে তার সঙ্গে? এমন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যেও কেউ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে বসবে, এটা হয়তো কারও কল্পনাতেও ঠাঁই পায়নি। তিনি বেড়াতে গিয়েছিলেন চ্যাথাম দ্বীপে। আর এখানকার নয়নাভিরাম মাউন্ট হ্যারিয়েট দেখার শখই তার জীবনের গল্পের ইতি টেনে আনে।
প্রখ্যাত লেখক নারায়ণ সান্যাল লিখেছেন,
বিশ্বাস করুন, কথাটা প্রথমে আমার আদৌ বিশ্বাস হয়নি। হবে কেমন করে? এমন হিমালয়ান্তিক প্রকাণ্ড সংবাদটা সাত-দশক দুনিয়াদারি করেও আমি জানতে পারিনি? একশ ত্রিশ বছর ধরে খবরটা চাপা পড়ে আছে; বিশ্বাস হয়? কোথাও তাে এমন কথা শুনিনি!
আমার ধারণা ছিল, ১৮৫৭ সনের পর, অর্থাৎ নানাসাহেব, তাঁতিয়া তােপী, লক্ষ্মীবাঈ এর পর প্রথম সশস্ত্র প্রতিবাদ এসেছিল মহারাষ্ট্রের নির্ভীক চাপেকার ব্রাদার্সের রিভলভারে। ১৮৯৭-এ। চল্লিশ বছর অপ্রতিবাদ গােলামি সহ্য করার পর। দামােদরহরি চাপেকার আর তার মেজভাই বালকৃষ্ণহরি পুনে শহরের রাজপথে প্রতিবাদের প্রথম রক্ত ঝরিয়েছিলেন কুখ্যাত অত্যাচারী ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার র্যান্ড আর তাঁর সহকারী আয়ার্স্ট-এর।
কিন্তু এঁরা বলছেন, তারও পঁচিশ বছর আগে সশস্ত্র প্রতিবাদ করেছিলেন একজন, মাত্র একজন, একেবারে একলা! তাছাড়া সেই আদিম বিপ্লবী কোনাে ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করেননি। এস.পি., ম্যাজিস্ট্রেট, কমিশনার বা গভর্নর নয়- একেবারে খাস হিজ এক্সেলেন্সি গভর্নর জেনারেল কাম-ভাইসরয়!
বছর তিনেকের সাজা খাটা বিপ্লবী শের আলী ধুঁকছেন সেই ১৮৬৯ সাল থেকে। তিনি চেয়েছিলেন চরম একটা প্রতিশোধ নিতে। তাই বলে ছোট একটা ছুরির আঘাতে ভাইসরয়কে কুপোকাত করার স্বপ্ন হয়তো তিনি নিজেও দেখেননি।
সিনেমার গল্পকে সেদিন হার মানিয়ে দিয়েছিল আন্দামানের নির্জন দ্বীপের বন্দি ‘বিপ্লবী’ শের আলি আফ্রিদির গর্জন। তার মরণকামড়ে প্রাণ যায় চতুর্থ ভাইসরয় রিচার্ড সাউথওয়েল বোর্ক, সিক্সথ আর্ল অব মেয়ো তথা লর্ড মেয়োর। দুঃসাহসী এই বিপ্লবী শের আলি আফ্রিদি ক্যালেন্ডারের পাতায় লাল কালিতে একটা দাগ দিয়ে চিরতরে স্মরণে বাধ্য করেছেন সেই ৮ই ফেব্রুয়ারি, ১৮৭২ এর দিনকে।
‘শের আলি আফ্রিদি, ইতিহাসের পাতায় বিস্মৃত এক নাম’ শীর্ষক প্রবন্ধে পুরো বিষয়টি অনেকটা নাটকীয়ভাবে তুলে ধরেছেন দীপক সাহা। অনেকটা ক্রিকেট-ফুটবলের ধারা বিবরণীর মতো তিনি লিখেছেন, “ডান হাতের মুঠোটা আপনা থেকেই শক্ত হয়ে গেল। সারা শরীরে শিহরণ। ওই তো বেশ কয়েকজন। একজনের হাতে মশাল। সন্ধ্যার ঘন অন্ধকার চিরে মশালের হালকা একটা আভা। কিন্তু লর্ড মেয়ো কোন লোকটা?
পেছনের সাহেবটি আচমকা দাঁড়িয়ে পড়তেই আড়াল সরে গেল! ওই তো! না, কোনো সন্দেহ নেই। ছবিতে যেমন দেখেছে৷ পেটানো চেহারা, পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুল-পোশাক, ইউনিফর্ম— না, আর এক মুহূর্ত দেরি নয়! পাথরের আড়াল থেকে তড়িৎগতিতে একটা ছায়া ছুটে গেল। পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির দশাসই অবয়ব। মুহূর্তে পিঠ ভেদ করে প্রায় ফুসফুস ছুঁয়ে ফেলল ধারালো ছুরিটা। একবার, দুবার– গভীর থেকে আরও গভীরে!
ফিনকি দিয়ে রক্ত! মশাল হাতে হৈহৈ করে ছুটে এল রক্ষীরা। মশালের আলোতে ঝলকে উঠল মেয়োর পিঠে বিদ্ধ রক্তাক্ত ছুরি। ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। ধরাধরি করে মেয়োকে একটি গরুর গাড়িতে ওঠানো হলো। শেষবারের মতো তিনি বললেন “আমার মাথাটা একটু উঁচু করে ধরো।” তারপর সব শেষ।“
লর্ড মেয়োকে হত্যার পর পালানোর চেষ্টা দূরে থাক এক চুল নড়ারও চেষ্টা করেননি শের আলি আফ্রিদি। তাই রক্ষীরা সহজেই তাকে আটক করে। দীর্ঘদিনের প্রতিজ্ঞা পূরণের পর সিনা টান করে দাঁড়িয়ে পাঠান যুবক শের আলি আফ্রিদি। তার ভাবভঙ্গিতে মনে হচ্ছে- ব্রিটিশ বড়লাটের ভবলীলা সাঙ্গ করাই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এরপর প্রহসনের বিচারপর্ব আর সবার অনুমান অনুযায়ী শাস্তিটা সেই মৃত্যুদণ্ডই।
যেন মোহিনী চৌধুরীর লিরিকের সেই চিরচেনা গানটা লেখা হয়েছিল এই শের আলিকে নিয়েই—
মুক্তির মন্দির সোপানতলে
কত প্রাণ হলো বলিদান
লেখা আছে অশ্রুজলে
কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা
বন্দীশালায় ঐ শিকল ভাঙা
তারা কি ফিরিবে আর
তারা কি ফিরিবে এই সুপ্রভাতে
যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে
দীর্ঘ একমাসের লোক দেখানো বিচারপর্ব। যাবজ্জীবন কারাবাসের আসামি যখন অগণিত সাক্ষীর সামনে এমন ভয়ানক হত্যাকাণ্ড ঘটায়, তার শাস্তি নিয়ে বলার কিছু নাই। আর সবার চোখের সামনে তার শিকার খোদ বড়লাট, ভারতের সর্বাধিনায়ক লর্ড মেয়ো।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইংরেজ বিচারপতি তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিলে তার উত্তর ছিল “খোদা নে হুকুম দিয়া। মেরা শারিক কোয়ি আদমি নেহি, মেরা শারিক খোদা হ্যায়।”। তারপর বিচারে সেই অনুমিত শাস্তি। ১৮৭২ সালের ১১ মার্চ ইংরেজরা ভাইপার দ্বীপে বিপ্লবী শের আলি আফ্রিদির ফাঁসির আদেশ কার্যকর করে।
লুটেরা, অত্যাচারী, ভিনদেশী নিপীড়ক ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অনেকেই চেষ্টা করেছিল প্রতিশোধ নিতে। তবে লর্ড মেয়োকে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রথম সফল বলা যেতে পারে শের আলি আফ্রিদিকেই। তাই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, বিনয়-বাদল-দিনেশ, মাস্টারদা সূর্য সেন, রাসবিহারী, বাঘা যতীন, ভগত সিং, ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্ল চাকির যে সাহস ও দেশপ্রেম, তার থেকে কোনো অংশেই কম ছিলেন না এই শের আলি আফ্রিদি।
তবে অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করা যায়, সবার বীরত্বগাথা নিয়ে ইতিহাসের যে চর্চা, সেখানে পরাক্রমশালী লর্ড মেয়োকে হত্যার মধ্য দিয়ে হাসিমুখে ফাঁসির দড়ি গলায় নেওয়া শের আলি আফ্রিদির নামও অনেকে জানে না।
সিনেমার গল্প হার মানিয়ে যাওয়া এই ইতিহাস জানার পর আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কে এই শের আলি আফ্রিদি? কী তাঁর পরিচয়? তিনি কীভাবে বিপ্লবী হয়ে উঠলেন? এত জায়গা থাকতে আন্দামান-নিকোবরে তার কী কাজ? সেসব জানার আগে নারায়ণ সান্যালের লেখা থেকে একটু পড়ে আসা যাক।
আমার জ্ঞানমতে, হিজ এক্সল্টেড এক্সেলেন্সির তনুদেহে সেই একবারই লেগেছিল বিপ্লবের আগুনের ছ্যাঁকা। তার আগে আর কখনাে নয়, পরেও নয়।
কিন্তু, এটা কী বলছেন এঁরা? ‘অ্যাটেম্পট টু মার্ডার’ নয়— ‘সাকসেসফুলি এক্সিকিউটেড অ্যাসাসিনেশন’! প্রকাশ্য স্থানে একবার নয়, পর পর দু’বার ছুরিকাঘাত করেছিলেন বিপ্লবী। তিন সেকেন্ডের ব্যবধানে। ওই একটা গভীর ক্ষত থেকে টেনে তুলে নিয়ে একই ছােরা দ্বিতীয়বার বিদ্ধ করতে যতটা সময় লাগে আর কী।
বড়লাটকে ঘিরে তখন আটজন সশস্ত্র দেহরক্ষী, দুজন এ-ডি-কং, অন্তত আধডজন উচ্চপদস্থ লালমুখাে সিভিল আর মিলিটারি অফিসার! মুহূর্তে যবনিকাপাত! ছুরিকাঘাতের পর পাঁচ মিনিটও জীবিত ছিলেন না হিজ এক্সেলেন্সি।
বলুন, এমন আজব কথা কি বিশ্বাস করা যায়? কথাটা প্রথম শুনেছিলাম অতি প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা ওম পুরীর কণ্ঠে। ‘লাইট-অ্যান্ড-সাউন্ড’ প্রােগ্রামে। সেলুলার জেল প্রাঙ্গণে। বিশ্বাস হয়নি। যাচাই করতে।
গেলাম সেলুলার জেলে—সেটা এখন আর্কিওলজিকাল ডিপার্টমেন্টের জাতীয় সংগ্রহশালা কিউরেটারের কাছে। তিনি বললেন, আজ্ঞে হ্যাঁ। কথাটা সত্য। ঘটনাস্থল আন্দামান, ভাইপার দ্বীপের বন্দর জেটি। তারিখটা ১৮৭২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি। সংক্ষিপ্ত বিচার-অন্তে বিপ্লবীর ফঁসি হয়ে যায় এক মাসের ভেতর।
এবারও বিশ্বাস হয়নি।
বিপ্লবী শের আলী আফ্রিদির জন্ম বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায়, মতান্তরে পেশোয়ারের জামরুদ গ্রামে। কৃষক বাবা ঊলি আলি খানের এই ছেলে পাঞ্জাব মাউন্টেড পুলিশে কিছুদিন চাকরি করেন। ওদিকে পেশোয়ার কমিশনারের দপ্তরেও কিছুদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল তার।
আম্বালার ঘোড় সওয়ারদের সঙ্গে থাকতে হয়েছিল কিছুদিন। ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে ১৮৫৭ সালের দিকে প্রেসিডেন্সি আর্মিতেও কাজ করেন তিনি। এরপর মেজর জেমস এবং রেনেল টেলরের সঙ্গে আর্দালি হিসেবে কাজ করেন তিনি। তবে এই সময় তার হাতে খুন হয় হায়দার আলি নামের এক ব্যক্তি।
ইংরেজদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি এবং অনেক বিপ্লবীকে ধরিয়ে দেওয়ার সন্দেহে হায়দরকে খুন করে পেশোয়ার থেকে তিনি গ্রেপ্তারও হন। এরপর ১৮৬৭ সালে ২ এপ্রিল বিচারে তাঁর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও কলকাতা হাইকোর্ট আপিলে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে তাঁকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে দণ্ডিত করে।
বছর দুয়েক পর ১৮৬৯ সালে শের আলিকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসাবে আন্দামানে নির্বাসন দেওয়া হয়। ২৫ বছরের যুবক শের আলির সঙ্গে সেই নির্জন আন্দামান দ্বীপে নির্বাসিত হন অনেক বিপ্লবী।
সেখানে খুনি, ডাকাত, সন্ত্রাসী সবাইকেই একসঙ্গে রাখা হত। এখানে রাজনৈতিক বন্দি বলে কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। ফলে কলকাতা থেকে ৭৫০ মাইল দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের ২০৪টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ছিল পৃথিবীর বুকে জঘন্য এক নরকের প্রতিচ্ছবি।
১৮৫৭ সালের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা সিপাহি বিপ্লবের পর ইংরেজরা প্রায় সব বিপ্লবীকে নৃশংসভাবে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে হত্যা করে। তার থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ২০০ জনের মতো কয়েদি নিয়ে ১০ই মার্চ ১৮৫৮ সালে আন্দামান দ্বীপে পা রাখে ঠাণ্ডা মাথার খুনী হিসেবে কুখ্যাত জেল সুপার জে বি ওয়াকার।
এর প্রায় এক যুগ পরে ১৮৭২ সালে লর্ড মেয়ো যখন আন্দামান বেড়াতে যান, সেখানে তখন ভারতীয় বন্দির সংখ্যা ৭,০০০ ছাড়িয়ে যায়।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আজীবন নির্বাসনে যাওয়া শের আলি আফ্রিদির সঙ্গে দেখা হয় বিপ্লবী মোহাম্মদ জাফর, ইয়াহিয়া আলী এবং মৌলভী আহমদুল্লার। তাদের সংস্পর্শে এসে তার মনে বিদ্যমান ঘৃণা আরও বেড়ে যায়। ব্যক্তি হিসেবে খুবই সরল, দয়ালু এবং ধর্মভীরু এই ব্যক্তি কারাগারে মজুরি হিসেবে যে অর্থকড়ির দেখা পেতেন, সেগুলোও সবার মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে অল্পদিনের মাঝেই বন্দীদের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন শের আলি।
এই নির্জন দ্বীপে নির্বাসন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে তিনি একজন উচ্চপদস্থ ব্রিটিশকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। তাই বলে খোদ ভাইসরয় তথা বড়লাটকে হত্যা করা তার নিজের চিন্তাতেও হয়তো ছিল না।
নির্জন আন্দামান দ্বীপের পাহাড়ে দিনের পর দিন শান দিতে থাকা তার ছুরির রক্তক্ষুধা এতটা বেড়ে গিয়েছিল তা কে জানত? আর সেজন্যই ১৮৭২ সালে ৮ই ফেব্রুয়ারী তৈরি হয় সেই সুযোগ। লর্ড মেয়ো আন্দামান পরিদর্শন আসবেন শুনেই শের আলি আফ্রিদি তার ভবলীলা সাঙ্গ করার চিন্তা করেন।
তিনি শুরু থেকেই নির্ধারণ করে নিয়েছিলেন তার ধরা পড়ার বিষয়টি। পাশাপাশি, তিনি জানতেন, এই কাজের শাস্তি হিসেবে তাঁর মৃত্যুও অবধারিত। মৃত্যুভয় তাকে সংকল্প থেকে দূরে ঠেলে দিতে পারেনি। তাই হয়তো ভারতীয় বিপ্লবীদের মধ্যেই তিনিই সবচেয়ে সফল যার হাতে প্রাণ হারায় একজন ভাইসরয় তথা বড়লাট।
নিজ জীবন উৎসর্গ করে মুক্তির সংগ্রামে সফল হওয়া বিপ্লবী শের আলি আফ্রিদির নাম অজ্ঞাত কারণে ভারতবর্ষের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে অনুচ্চারিত রয়ে গিয়েছে। তাই ১৮৭২ সালে ৮ ফেব্রুয়ারী দিনটিকে যেখানে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার পাশাপাশি উৎসবমুখর পরিবেশে স্মরণ করার কথা, তার কিছুই করা হয় না।
এমনকি ভারতীয় উপমহাদেশের কোনো পাঠ্যপুস্তকেও খুঁজে পাওয়া যায় না এই মহান বিপ্লবীর নাম। স্বাধীনতার স্বপ্নে জীবন উৎসর্গকারী এই বিপ্লবীকে বাদ দিয়ে কোনো ইতিহাস লেখা হলে তা অবশ্যই খণ্ডিত এবং অসম্পূর্ণ। ইতিহাস গবেষকদের পাশাপাশি পাঠকদের উচিৎ এই বিপ্লবীর অর্জনকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা।