মুড়ির হাজার বছরের ইতিহাস জানতে দেখুন আমাদের ভিডিও
আর্টিকেল পড়ুন
রমজান মাসে ইফতারের সময় যেসব খাবার আইটেম না হলে অনেকের ইফতারই জমে না, মুড়ি তার মাঝে একটি। ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনীর মতো নানা আইটেম দিয়ে মাখিয়ে একসাথে কয়েকজন মিলে বসে মুড়ি মাখা দিয়ে ইফতারি খাওয়ার যে কী মজা, সেটা যারা এটা অনুভব করতে পারে, কেবল তারাই বোঝে!
সাম্প্রতিককালে অবশ্য এই মুড়ি মাখানোতে জিলাপির অংশগ্রহণ থাকা উচিত কিনা- তা নিয়ে সমাজের নানা স্তরে অনেক তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে, তবে আমরা সেদিকে যাব না। আমরা বরং চলে যাব সবার প্রিয় মুড়ির ইতিহাসেই, হাজার বছরের পুরনো যে ইতিহাস আমাদের চমকপ্রদ সব তথ্যের সাথেই পরিচিত করিয়ে দেবে।
পাথর যুগের শিকারী সংগ্রাহক মানুষ একসময় মাংস ঝলসে খেতে শুরু করে। পরে তারা যাযাবর জীবন ত্যাগ করে স্থায়ী আবাসন তৈরি করে, কিংবা তাদের খাদ্য সংগ্রাহক থেকে পরবর্তী ধাপের খাদ্য উৎপাদনকারী সমাজে প্রবেশ করে।
ধারণা করা হয়, এই সময় থেকেই শুরু হয় মুড়ির ইতিহাস। মাংসের পাশাপাশি নব্যপ্রস্তুর যুগের মানুষ যখন থেকে শস্যকণাও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ ও উৎপাদন শুরু করে, তখন মাংস ঝলসানোর মতো মাটির পাত্রে মুড়ি ভেজে খাওয়া শুরু হয়ে থাকতে পারে।
ভারতের ইতিহাসে মৌর্য যুগেরও বেশ আগে সেই জনপদের সময়, তথা মগধের উত্থানপর্ব থেকে মুড়ির প্রচলন ছিল। অনেকে মনে করেন, বৈদিক যুগে দেবতাদের জন্য যে যজ্ঞ হতো, সেখানেও চালভাজার স্থান ছিল। তাই আমরা ঐ চালভাজাকে মুড়ি তথা Puffed Rice-এর আদিরূপ হিসেবে শনাক্ত করতে গেলে সেটা দোষের কিছু হবে না।
ধারণা করা হয়, হিব্রু সভ্যতার সাথে মুড়ির ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। হিব্রু তথা হাবিরু, খাবিরু, বা বর্তমান ইহুদি জাতি সৃষ্টির আদিকাল থেকেই যাযাবর ছিল। বিভিন্ন জাতির তাড়া খেয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তাদের পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। তখন তারা বহনযোগ্য খাদ্য হিসেবে শুকনো মাংস বা জার্কির পাশাপাশি, কিশমিশ ও মুড়িকে অনেক গুরুত্ব দিত। হিব্রুরা মুড়িকে পিপুজে ওরেজ (Pitzputzey Orez) নামে ডাকত।
যুদ্ধবাজ স্পার্টান কিংবা গণতান্ত্রিক গ্রিসেও মুড়িকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বহনযোগ্য ও সংরক্ষণযোগ্য সহজপাচ্য খাদ্য হিসেবে ধরা হতো। তারা মুড়িকে রাইজো সোফিয়াত্তো (Riso soffiato) নামে ডাকত বলে জানা যায়। একইভাবে দক্ষিণ ভারতে ছত্রপতি শিবাজী তার যোদ্ধাদের শুকনা খাবার হিসেবে চাক চাক গুড় এবং মুড়িকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
আমাদের দেশে এখন যে মজাদার মসলাসহ ঝালমুড়ি খেতে দেখি, সেটার ইতিহাসও বেশ পুরাতন। ধারণা করা হয়, মোগলাই ডিশগুলোর স্পাইসি টেস্ট থেকে দেশীয় রন্ধনশিল্পীরা মুড়ির সাথে তেল-মশলা মাখিয়ে একে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।
মুঢঢি, ভুজা, মালারু, ভুজিয়া যে নামেই ডাকা হোক না কেন, দক্ষিণ ভারতে মুড়ি স্মরণাতীত কাল থেকে বেশ জনপ্রিয়।
পাঞ্জাবীরা অনেক ক্ষেত্রেই উৎসবপ্রিয় জাতি। তাদের যেকোনো গানের অনুষ্ঠান, কিংবা ধর্মীয় উৎসব আয়োজন, এমনকি শিখদের গুরুদুয়ারার ভোগেও মুড়ির প্রচলন ছিল বলে জানা গেছে। তারা মুড়িকে ফুলিয়ান নামে ডাকত।
এভাবেই হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে বেশ আকর্ষণীয়, এবং অবশ্যই দলবেঁধে খাবার মতো ফুড আইটেম হয়ে ছিল আমাদের অতি পরিচিত মুড়ি; নিঃসন্দেহে থাকবে সামনের দিনগুলোতেও।