প্রাচীন ব্যাবিলনে নারীদের নিলামে তোলা নিয়ে জানতে দেখুন আমাদের ভিডিও
আর্টিকেল পড়ুন
দলবেধে কুমারীদের জড়ো করা হতো এক জায়গায়। অল্প বয়সী, লাজুক সেই মেয়েগুলো জড়তা ভেঙে আশেপাশে সেভাবে তাকাতে পারত না। এর মাঝেই মধ্যবয়সী এক লোক নিলামের দর হাঁকতে থাকত। মাঝখানে নিলামকারী, তার আশেপাশে কমবয়সী অনেকগুলো মেয়ে, আর তাদের দিকে তাকিয়ে থাকত অজস্র পুরুষ। সবার উদ্দেশ্য একটাই- এই মেয়েগুলোকে কিনে নেবে তারা! দাসী হিসেবে না, বউ হিসেবে!
অদ্ভুত শোনাচ্ছে? যেমনই লাগুক না কেন, সত্যি সত্যিই এককালে ব্যাবিলনে এই চর্চা ছিল। ইতিহাসের গল্পের এই ভিডিওতে সেই ইতিহাসই শোনানো হবে আপনাদের! এর আগে চলুন একটু ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি সেরে নেয়া যাক।
এখন থেকে প্রায় ২,৫০০ বছর আগেকার কথা। প্রাচীন গ্রীক নগরী হ্যালিকার্নাসাসে (Halicarnassus) জন্ম নেয় এক শিশু। কালের আবর্তে নিজের মেধা আর পরিশ্রমের বদৌলতে এত দিন পরে এসেও পৃথিবী যাকে মনে রেখেছে বিখ্যাত এক ইতিহাসবিদ ও ভৌগলিক হিসেবে। মানবজাতির ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা তিনিই পদ্ধতিগতভাবে যাচাইবাছাই করে লিপবদ্ধকরণ শুরু করেন।
তার এই কাজে মুগ্ধ হয়ে প্রায় ২,১০০ বছর আগেকার রোমান রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী, পণ্ডিত, দার্শনিক ও সুবক্তা সিসেরো তার নাম দিয়েছিলেন ‘দ্য ফাদার অব হিস্ট্রি’! ডিয়ার ভিউয়ার, আপনার যদি ইতিহাস ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে কম-বেশি জানাশোনা থাকে, তাহলে এতক্ষণে বুঝে যাবার কথা আমি কার কথা বলছি। জ্বি, আমি হেরোডোটাসের কথাই বলছিলাম, আমরা যাকে চিনি ‘ইতিহাসের জনক’ হিসেবে।
এবার আমরা যে প্রাচীন ব্যাবিলনের বিয়ের বাজার নিয়ে আলাপ করব, সেই সম্পর্কে জানা গিয়েছে হেরোডোটাসেরই বিখ্যাত রচনা ‘হিস্টোরিজ’ (Histories) থেকে। শুরুতে তাই চলুন বিশ্বের ইতিহাসে বিখ্যাত এই বইটি নিয়েই কিছু জানা যাক।
৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ, অর্থাৎ এখন থেকে ২,৪০০ বছরেরও বেশি সময় আগে লেখা হিস্টোরিজ-কে পাশ্চাত্য সাহিত্যজগতে ইতিহাস বিষয়ক সাহিত্যের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রাচীন গ্রীস, পারস্য সাম্রাজ্য, পশ্চিম এশিয়া, এবং আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলের সেই সময়কার ইতিহাস, ঐতিহ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ভৌগলিক অবস্থা, বিভিন্ন সাম্রাজ্যের মধ্যকার সম্পর্ক- ইত্যাদি নানা বিষয় সম্পর্কে জানবার গুরুত্বপূর্ণ উৎস হেরোডোটাসের এই ‘হিস্টোরিজ’ সাহিত্যকর্মটি।
যা-ই হোক, এখন চলুন হেরোডোটাস আর তার হিস্টোরিজের আলাপ একপাশে রেখে প্রাচীন ব্যাবিলনের বিয়ের বাজারে ঢোকা যাক। এই ব্যাপারে জানা গিয়েছে হিস্টোরিজের Book 1 এর শেষভাগ থেকে।
প্রাচীন ব্যাবিলনের প্রতিটি গ্রামেই বছরে একবার বেশ জাঁকজমকপূর্ণ এক মেলার আয়োজন করা হতো। গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে তাদের বিয়ের উপযুক্ত কোনো কন্যা থাকলেই তাকে নিয়ে আসা হতো সেই মেলায়। মেয়েটি কি স্বেচ্ছায় আসতো, নাকি অনিচ্ছায়, নাকি এটাই তার নিয়তি এমনটা মেনে নিয়ে আসতো- সেটা আর জানার উপায় নেই।
আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পুরুষরা সেই স্থানে এসে ভিড় জমাত। যেসব জায়গায় এই কুমারীদের জড়ো করা হতো, তারা সেখানে গোল করে ঘিরে দাঁড়াত। সেখানে একজন নিলামকারী একে একে বিভিন্ন কুমারীকে প্রদর্শন করত, আর তাকে বিয়ে করতে কত মূল্য পরিশোধ করতে হবে সেটা উচ্চস্বরে জানান দিতে থাকত। এভাবে চলত নিলামের কার্যক্রম। এই বাজারে আসা, কিংবা আসতে বাধ্য হওয়া মেয়েদের সকলেই অবিবাহিতা হলেও পুরুষদের বেলায় এর কোনো বালাই ছিল না। তারা পূর্ব-বিবাহিত কিংবা বিবাহিত উভয়টাই হতে পারত।
নিলামের শুরুটা হতো সবচেয়ে রুপসী কুমারীকে দিয়ে। তার জন্য পাত্র নির্ধারণ হয়ে গেলে এরপর সৌন্দর্যের দিক দিয়ে পরবর্তী কুমারীকে নিলামে তোলা হতো। এভাবে একে একে সবাইকেই পাত্রস্থ করা হতো। আপনি যদি ভেবে থাকেন যে, এভাবে নিলামের মাধ্যমে আসলে তাদের দাসী হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছিল, তাহলে ভুল ভাবছেন। বরং আসলেই তাদের বিয়ের জন্যই অদ্ভুত রকমের এই আয়োজন চালু ছিল সেই সময়ের ব্যবিলনে।
উপস্থিত পাত্রদের মাঝে যার অর্থের অভাব ছিল না, সে সহজেই রুপসী কাউকে নিজের জীবনসঙ্গিনী হিসেবে বেছে নিতে পারত। যেমনটা আগেও বলা হয়েছে- এই মেয়েটি তার প্রথম স্ত্রী যেমন হতে পারত, তেমনই বেশ কয়েকজন স্ত্রীর মাঝে নতুনজনও হতে পারত। ওদিকে, যেসব পুরুষের হাতে অর্থ তেমন না থাকলেও বিয়ের ইচ্ছা থাকত, তারা তুলনামূলক কম রুপসী কাউকেই জীবনসঙ্গিনী হিসেবে বেছে নিত।
আজকের দিনে আপনার-আমার কাছে প্রাচীন ব্যাবিলনের এই চর্চা শুনতে যেমনই লাগুক না কেন, তাদের কাছে এটা ছিল খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। আসলে লোভ তাদের মাঝে এতটাই জেঁকে বসেছিল যে এর কাছে নীতিবোধ, পারিবারিক মূল্যবোধ কিছুই টিকতে পারত না।
ব্যাবিলনীয় উপকথা অনুসারে, যুদ্ধ ও প্রকৃতির দেবী হিসেবে মানা হয় বেল্টিসকে। সেই সাথে তাকে ‘দেবতাদের মা’ হিসেবেও মানত তারা। এই বেল্টিসের মন্দিরেই জীবনে একবার হলেও একজন নারীকে আসা লাগত এই উদ্দেশ্যে যে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজপুত্র, ধনী ব্যক্তিবর্গ, কিংবা বিয়ের প্রত্যাশায় থাকা পুরুষরা এসে তাদের দেখবে, এবং পছন্দ হলে বিয়ে করে নিয়ে যাবে।
ভাইয়েরা তাদের বোনদের নিয়ে যেত, বাবারা নিয়ে যেত তাদের মেয়েদের- এভাবেই টিকে ছিল প্রাচীন ব্যাবিলনের এই বিয়ের বাজার। অবশ্য এখানে যে বিয়েতে ভালবাসার চেয়ে মেয়ের পরিবারের সদস্যদের অর্থলাভ, এবং মেয়েটিকে স্ত্রী হিসেবে কিনে নিতে আসা বরের যৌন চাহিদা পূরণের দিকটাই বেশি প্রাধান্য পেত- সেটা না বললেও চলে।