চীনা হারেম নিয়ে জানতে আমাদের ভিডিও দেখুন
আর্টিকেল পড়ুন
চীনের ইতিহাসের দিকে যদি আপনি তাকান, তাহলে অবধারিতভাবেই চলে আসবে সেখানকার রাজকীয় সব হারেমের কথা। একেকজন সম্রাটের যে কতজন স্ত্রী লাগত চাহিদা মেটাবার জন্য, তার হিসেব রাখা ছিল সত্যিই কঠিন। চীনের ইতিহাসে এমনও সময় গিয়েছে, যখন রাজার শয্যাসঙ্গিনী হতে হারেমে উপস্থিত ছিল ২০ হাজারেরও অধিক সুন্দরী রমণী।
অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, আসলেই কি এমনটা সম্ভব? জ্বি, এমনটা আসলেই হয়েছিল এককালে। আর চীনা হারেমের বিচিত্র সেই কাহিনীই জানানো হবে এই ভিডিওতে।
স্বাভাবিকভাবেই একজন রাজা চাইবেন যে সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে তার রাজ্য টিকে থাকুক যুগের পর যুগ, আসুক সমৃদ্ধি, বাড়ুক তার আয়তন। কিন্তু এই যে এত কিছু চাওয়া, তা তো আর এক জীবনে একজন রাজার পক্ষে করে যাওয়া সম্ভব না, তাই না? এজন্যই দরকার একজন বংশধর। আরও নির্দিষ্ট করে বললে- একজন পুত্রসন্তান।
চীনের সম্রাটরাও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। নিজের বংশধারা টিকিয়ে রেখে সাম্রাজ্যের শৌর্যবীর্য যাতে অব্যাহত থাকে, সেজন্য তারাও সর্বদা পুত্রসন্তান কামনা করতেন। সেই পুত্রসন্তান অসুখ-বিসুখ, যুদ্ধবিগ্রহ কিংবা অন্য কোনো দুর্ঘটনায় মারা গেলেও যেন তার জায়গাটা যোগ্য অন্য কোনো ছেলে নিতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হতো তাদের।
এজন্য চীনা সম্রাটদের ছিল রাজকীয় হারেম। সেখানে রাখা হতো শত-সহস্র নারীকে। যাদের কাজ ছিল মূলত সম্রাটের বংশবৃদ্ধির ব্যবস্থা করা, পুত্রসন্তান জন্ম দেয়ার মাধ্যমে তার বংশধারা টিকিয়ে রাখা।
এই যে এত নারীর কথা বলা হচ্ছে, তারা কি যেনতেনভাবে থাকতেন সেই হারেমে? সেখানে কি কোনো নিয়মশৃংখলা ছিল না? অবশ্যই ছিল। নাহলে তো আর এই হাজার হাজার নারীকে ঠিকভাবে সেখানে রাখাই সম্ভব হতো না! সময়ে সময়ে চীনা সম্রাটদের হারেমে থাকা নারীদের পদমর্যাদার পরিবর্তন ঘটেছে। তবে মোটাদাগে এই পদমর্যাদাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
১) সম্রাজ্ঞী,
২) স্ত্রী, এবং
৩) উপপত্নী।
এর পাশাপাশি হারেমে যে Eunuch অর্থাৎ নপুংসক বা খোজা ব্যক্তিদের নিয়োজিত করা হতো, তাদেরও এই হারেমের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা যায়।
হারেমে থাকা নারীদের মাঝে পদমর্যাদার দিক দিয়ে শীর্ষস্থানে ছিলেন একজন সম্রাজ্ঞী। অফিসিয়ালভাবে তাকেই সম্রাটের স্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। অর্থাৎ, সম্রাটের শয্যাসঙ্গিনী হয়তো আরও শত-সহস্র রমণী হতে পারে, তবে সম্রাজ্ঞীর পদমর্যাদা জুটবে কেবলমাত্র একজনের কপালে। চীনে তাই সকলের কাছেই বেশ শ্রদ্ধার পাত্রী ছিলেন সম্রাজ্ঞী। সবাই তাকে বিবেচনা করত ‘বিশ্বের জননী’ হিসেবে!
হারেমে সম্রাজ্ঞীর চেয়ে উঁচু পদে থাকতেন কেবলমাত্র আর দুজন। একজন সম্রাট নিজে, আরেকজন সম্রাটের মা। এছাড়া হারেমের অন্য সকলেই সম্রাজ্ঞীর আদেশ মেনে চলতে বাধ্য থাকত।
যদি কোনো সম্রাজ্ঞীর স্বামী মারা যেত, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তার বংশধরদের মাঝে যোগ্য কারও হাতে চলে যেত সাম্রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব। আর বিধবা সেই সম্রাজ্ঞী তখন চলে যেতেন হারেমে। তাকে সেখানকার সম্ভ্রান্ত নারী হিসেবে গণ্য করা হতো, যেমনটা একটু আগেই বলা হলো।
এবার আসা যাক পদমর্যাদার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্ত্রীদের আলাপে। এই স্ত্রীর সংখ্যা ও পদমর্যাদা চীনের ইতিহাসের একেক রাজবংশের সময় একেক রকম ছিল। এই যেমন চিং (Qing) রাজবংশের কথাই ধরা যাক। সেখানে সর্বমোট ৭ জন স্ত্রী রাখার নিয়ম ছিল। এই সাতজনের মাঝেও আবার ভাগ ছিল।
- ১ জন থাকতেন রাজকীয় অভিজাত পদমর্যাদাভুক্ত স্ত্রী
- ২ জন থাকতেন অভিজাত পদমর্যাদাভুক্ত স্ত্রী
- আর বাকি ৪ জন থাকতেন সাধারণ স্ত্রী হিসেবে
এছাড়া হারেমে অন্য আর যেসকল নারী স্ত্রীদের পদমর্যাদার নিচে থাকতেন, তাদের সবাইকে উপপত্নীর দলে ফেলা হতো। একজন সম্রাটের যে কতজন উপপত্নী থাকত, তার কোনো হিসাব ছিল না। যে যতজন খুশি ততজন উপপত্নী গ্রহণ করতে পারতেন।
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের দিকে রচিত চীনা গ্রন্থ ‘Rites of Zhou’। এতে মূলত চীনা রাজসভার আমলাতন্ত্র ও প্রাতিষ্ঠানিক নানা বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই বই থেকে জানা যায়, একজন চীনা সম্রাট ৯ জন উচ্চ পদমর্যাদার উপপত্নী, ২৭ জন মধ্য পদমর্যাদার উপপত্নী, এবং ৮১ জন নিম্ন পদমর্যাদার উপপত্নী রাখতে পারতেন।
আচ্ছা, খেয়াল করেছেন কি যে এখানে ৩ দিয়ে গুণের খেলা হয়েছে! মানে উচ্চ পদমর্যাদার যতজন উপপত্নী থাকবে, মধ্য পদমর্যাদার থাকবে তার ঠিক ৩ গুণ। আবার মধ্য পদমর্যাদার উপপত্নী যতজন থাকবে, নিম্ন পদমর্যাদার থাকবে এর ৩ গুণ। এমনটা কেন হলো? উত্তরটা আমার জানা নেই!
তবে, মাত্র এই কয়জন পত্নী-উপপত্নী নিয়ে সব রাজা আবার সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাদের দরকার হতো আরো আরো শয্যাসঙ্গী। সংখ্যাটা শুনলে চোখ কপালে ওঠা ছাড়া গতি থাকবে না।
এই যেমন প্রায় ৪০০ বছর ধরে টিকে থাকা হান রাজবংশের সম্রাটদের কথাই ধরা যাক। তাদের চাহিদা ছিল শত শত পত্নী-উপপত্নীর। এই রাজবংশের সময়েই ১৪৬ থেকে ১৬৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সিংহাসনে থাকা সম্রাট হুয়ান, এবং ১৬৮ থেকে ১৮৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দায়িত্বরত সম্রাট লিঙের আমলে তাদের শয্যাসঙ্গিনী হতে হারেমে ২০,০০০ এর অধিক নারীকে রাখা হয়েছিল বলে জানা যায়!
যে কেউ চাইলেই কি সম্রাটের এই পত্নী-উপপত্নীদের দলে নাম লেখাতে পারত? মোটেই না! এজন্য তাকে অবশ্যই নির্ধারিত কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হতো। এই যেমন ১৩৬৮ থেকে ১৬৪৪ সাল পর্যন্ত টিকে থাকা মিং রাজবংশের কথাই বলা যাক।
সেই সময় উপপত্নী নির্বাচনের জন্যও বিশেষ একধরনের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হতো আগ্রহী কিশোরীদের। আর এই পরীক্ষা প্রতি তিন বছর পর পর অনুষ্ঠিত হতো। প্রথম শর্তই ছিল যে প্রার্থীর বয়স অবশ্যই ১৪ থেকে ১৬ বছরের মাঝে হতে হবে। এর কম কিংবা বেশি কোনোটাই হওয়া চলবে না। এর পাশাপাশি সেই কিশোরীদের পারিবারিক প্রেক্ষাপট, শারীরিক সৌন্দর্য, আচার-আচরণ, চারিত্রিক গুণাবলী, স্বভাব-চরিত্র, সুস্থতার মতো বিষয়গুলোও আমলে নেয়া হতো।
এই যে হাজার হাজার নারীকে রাজার শারীরিক সম্ভোগের জন্য হারেমে রাখা হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তাসহ নানা কাজে তো পুরুষদের নিয়োজিত করাই লাগত। কিন্তু, যাদের নিরাপত্তায় সেই পুরুষেরা নিয়োজিত, সেই তাদের সাথেই যদি পুরুষেরা গোপন সম্পর্কে লিপ্ত হয়? এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়ার কোনো উপায় ছিল না। তাই তো চীনা সম্রাটদের হারেমে সম্রাট ছাড়া আর কোনো ‘সক্ষম পুরুষের’ প্রবেশাধিকার ছিল না।
সক্ষম পুরুষ কেন বললাম? কারণ অক্ষম পুরুষরা, মানে দৈহিক মিলনে অক্ষম পুরুষরা ঠিকই হারেমে প্রবেশ করতে পারত। তাদের কথাও বলেছিলাম এই ভিডিওর শুরুর দিকে। যেহেতু চিকিৎসা করে তাদের নপুংসক করে দেয়া হয়েছে, ফলে তাদের মাধ্যমে হারেমে থাকা নারীদের গর্ভধারণের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। ফলে পুরুষ হিসেবে সম্রাটের পর কেবলমাত্র তারাই হারেমে প্রবেশাধিকার পেতেন।
তবে, এই নপুংসক ব্যক্তিরা কেবল হারেমই না, এর পাশাপাশি রাজদরবারের নানা পদেও নিয়োজিত থাকতেন- চীনের ইতিহাসই এর সাক্ষ্য দেয়। সেখানে তারা যেমন নিম্নপদে চাকরি করেছে, তেমনই হয়ে উঠেছে সমাজের ক্ষমতাধর ব্যক্তি, অর্থবিত্তের দিক দিয়ে নিজেদের নিয়ে গেছে ঈর্ষণীয় স্থানে। মিং রাজবংশের সময় চীনা সম্রাটের রাজদরবার এবং হারেমের খেদমতে ১ লক্ষেরও বেশি নপুংসক ব্যক্তি নিয়োজিত ছিল।
আচ্ছা, হারেমে যে এত শত নারীর কথা বলা হচ্ছে, তাদের মাঝে কি ঝগড়াঝাটি হতো না? অবশ্যই হতো! এতগুলো মানুষ একসাথে থাকবে, আর তাদের মাঝে মনোমালিন্য হবে না, একে অপরের পেছনে লাগতে যাবে না- এমনটা কি কখনও সম্ভব?
হারেমে থাকা সম্রাটের স্ত্রী আর উপপত্নীদের মাঝেও তাই প্রতিযোগিতার শেষ ছিল না। মাঝে মাঝেই তাদের মনোমালিন্য খুনোখুনি পর্যন্ত গড়াত। আর এই উদ্দেশ্যে তারা সাহায্য নিত হারেমের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত নপুংসকদেরই। মিশন সাক্সেসফুল হলে সেই নারী যেমন পথের কাটা সরিয়ে নিজের পদমর্যাদা উপরে তোলার সুযোগ পেত, তেমনই সেই নপুংসকের ভাগ্যেও জুটত মোটা অঙ্কের পুরস্কার।
এই যেমন ট্যাং রাজবংশের সময়কার একটা ঘটনাই বলা যায়। এই রাজবংশের এক রাজা গাওজংয়ের য়্যু জেতিয়ান নামে এক উপপত্নী ছিল। প্রচলিত ইতিহাস আমাদের জানায়, নিজের পদমর্যাদা উপরে তুলতে য়্যু জেতিয়ান নিজের সদ্যোজাত সন্তানকে খুন করে হত্যার দায় চাপিয়ে দেয় সরাসরি গাওজংয়ের সম্রাজ্ঞী ওয়াংয়ের ঘাড়ে। দুর্ভাগ্যবশত, গাওজং এই চাল বুঝতে পারেননি। তিনি য়্যু জেতিয়ানের সৌন্দর্যে এতটাই বিমোহিত ছিলেন যে, সেই অভিযোগ বিশ্বাস করে ওয়াংকে সরিয়ে য়্যু জেতিয়ানকেই নতুন সম্রাজ্ঞী হিসেবে ঘোষণা করেন!