মঙ্গোল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন নিয়ে আমাদের ভিডিও দেখুন
আর্টিকেল পড়ুন
কারাকোরাম থেকে ককেশাস অঞ্চলের দূরত্ব যাই হোক, ১২০৮ থেকে ১৩৬৮ সালের মধ্যবর্তী সময়টা প্রায় দেড় শত বছরের। দ্বাদশ শতকের শেষে এসে প্রায় সমস্ত পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্য ইউরোপ মঙ্গোলদের দখলে। পঙ্গপালের ঝাঁক যেমন আকাশ ঢেকে দেয়, তেমনি মঙ্গোল সেনাদল গিলে খেয়েছিল বিশ্বমানচিত্রের সিংহভাগ।
তৎকালে কম-বেশি সবই বুঝতে পেরেছিল- মৃত্যুতাণ্ডবের আরেক নাম মঙ্গোল আক্রমণ। খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধ নগর উরগঞ্জ মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেও কি রক্ষা পেয়েছিল? না। উল্টো নগরটি পতনের পর সমস্ত অধিবাসীকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয় রক্তপিপাসু চেঙ্গিস খান। পৃথিবীর এই ইতিহাসের পাতায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ সৃষ্টির জন্যই হয়তো এসেছিল মোঙ্গলরা।
ঘোড়ার খুরের ধুলায় ধূসরিত জনপদে তলোয়ারের ঝনঝনানি আর আর রক্তের হোলিখেলার মাঝে ভয়াল দ্বীপের মতো জেগে ওঠা মাথার খুলির পিরামিড। তাই তো মঙ্গোল নেতা চেঙ্গিস খান নিজেই বলেছে, “আমিই স্রষ্টার পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আসা গজব। তোমরা যদি পাপের সাম্রাজ্য গড়ে না তুলতে, তাহলে সৃষ্টিকর্তাও আমার মতো গজবকে তোমাদের উপর নাজিল করতেন না।”
একজন দিগ্বিজয়ী সম্রাট হয়েও বাক্যালাপে যার এমন হিংস্র জিঘাংসার উচ্চারণ তার উত্থানপর্বটাও রক্তে ভেজা হওয়াই স্বাভাবিক। হয়েছিল ঠিক তাই। শিকার, শক্তি, কুস্তি লড়ার সক্ষমতা কিংবা বুদ্ধিমত্তা সবদিক থেকে এগিয়ে থাকা শিশুটির নাম ছিল তেমুজিন। শিকারের পর পশুর মাংস বণ্টন নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জের ধরে তার ভাইকেই খুন করেছিল কিশোর তেমুজিন।
এরপর তেমুজিন থেকে চেঙ্গিস খান হয়ে ওঠার পর তার শিকার হয় কুস্তিগির বুরি। তেমুজিনের ভাই বেলগুতেই একবার লড়াইয়ে হারে বুরির কাছে। পরবর্তীকালে প্রাণ দিয়ে তাকে সেই শোধ দিতে হয়।
যুদ্ধজয়ের পর মঙ্গোলদের নৃশংসতার কথা শুনলে যে কেউ শিউরে উঠবেন। যেমন, শুধু সন্দেহের বশে ভয়াবহ নির্যাতন করে গুয়ুক খানের সময় হত্যা করা হয় ক্ষমতাশীল সভাসদ ফাতিমাকে। প্রথমে ফাতিমার ঠোঁট সেলাই করে এরপর তাকে পশমি কাপড়ে মুড়ে ফেলে দেয়া হয় নদীতে।
অন্যদিকে, বাগদাদের সর্বশেষ আব্বাসীয় খলিফা আল-মুস্তাসিম বিল্লাহকে মঙ্গোলরা হত্যা করে ভয়াবহ উপায়ে। প্রথমে গালিচা দিয়ে তাকে মুড়িয়ে তার উপর দিয়ে ক্রমাগত ঘোড়া ছুটিয়ে হত্যা করা হয় তাকে।
কল্কা নদীর যুদ্ধে মঙ্গোলরা জয়লাভ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। তারা রুশ যুবরাজদের প্রথমে কিছু চওড়া কাঠের তক্তার ভেতরে আটকে দেয়। এরপর সেই তক্তার উপর বিজয়ভোজ আয়োজন করায় প্রচণ্ড চাপে দম বন্ধ হয়ে মারা যায় রুশ যুবরাজেরা।
একইভাবে পারস্যের এক সাহসী যোদ্ধাকেও তারা হত্যা করে পাশবিকভাবে। তারা লোকটার শরীরে ভেড়ার চর্বি মেখে হাত-পা বেঁধে, পশমি কাপড়ে মুড়ে ফেলে রেখেছিল কড়া রোদে। প্রচণ্ড গরমে প্রায় সেদ্ধ হয়ে মারা যায় সেই যোদ্ধা।
তুর্কি আর ইরানী রক্তের মিশ্রণে গড়ে ওঠা মঙ্গোল জাতির বসবাস ছিল আধুনিক মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে। শুরুতে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ পালনের পাশাপাশি কৃষিকাজ তাদের পেশা ছিল। তবে খাবার সংকট তাদের আগ্রাসী হতে বাধ্য করে প্রাথমিকভাবে। তখন আশেপাশের গোত্রে আক্রমণ করে খাবার ছিনিয়ে নেওয়ায় বেশ পরিচিতি পায় তারা।
১১৬২ সালে মঙ্গোলিয়ার খেনতি পর্বতমালার বুরখান খালদুন পর্বতের কাছে ওনন নদীর তীরে জন্ম চেঙ্গিস খানের। তার জীবনের বাস্তব কাহিনীগুলো এতটাই ভয়াবহ যে তা কল্পকাহিনীকে হার মানাতে বাধ্য। তিনি নাকি মুঠোভরা রক্ত নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
মঙ্গোলীয় কিংবদন্তী অনুসারে, রক্ত মুঠোয় নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা ভবিষ্যতে বিজেতা রূপে আবির্ভূত হয়। আর চেঙ্গিস খানের উত্থান অনেকটা এভাবেই। তার বাবা ইয়েসুগেই তৎকালীন মোঙ্গল গোত্র বোরজিগিন-এর গোত্রপ্রধান তথা খান ছিলেন।
একেবারেই কৈশোরে চেঙ্গিসের প্রেম হয় কোরাইট গোত্রের বোর্তের সঙ্গে। বারো বছর বয়সে বিয়ে ঠিক হলেও মোঙ্গলদের চিরাচরিত নিয়ম মেনে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ব অবধি বোর্তে তার গোত্রেই থেকে যান। তবে তেমুজিনের বাবাকে উটের দুধের সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যা করতে সমর্থ হয় এক তাতার। তারপর ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে তেমুজিনের সামনে।
ইয়েসুগেইয়ের মৃত্যু তাদের সামনে নতুন সংকট হাজির করে। নতুন নেতা নির্বাচনের বৈঠকে বালক তেমুজিনকে তাদের নেতা হিসেবে কেউ মানতে চায়নি। তারা অন্য একজনকে নতুন গোত্রপ্রধান নির্বাচিত করে। সে বিপদ ভেবে তেমুজিনের পুরো পরিবারকে বন্দির চেষ্টা চালায়। তবে ধূর্ত তেমুজিন সুযোগ বুঝে তার পরিবার নিয়ে জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এসময় জঙ্গলে কাটানো সাতটি বছর তার বাকি জীবনের কাহিনী লিখেছিল আপন খেয়ালে। ১৭ বছর বয়সে স্ত্রী বোর্তেকে নিজ ঘরে নিয়ে আসে তেমুজিন। পিতৃশত্রু মারকিতরা গোত্রকে আক্রমণ করে তার স্ত্রী বোর্তেকে তুলে নিয়ে যায়। মূলত এই সময় থেকে তেমুজিনের চেঙ্গিস খান হয়ে ওঠা। তুঘরিল খান ও জমু খাঁনকে নিয়ে তিনি লড়াই শুরু করেন। অল্পদিন ব্যবধানে তেমুজিন প্রায় প্রতিটি মোঙ্গল গোত্রকে নিজের পতাকাতলে নিয়ে আসতে সক্ষম হন।
তেমুজিন মোঙ্গল বংশোদ্ভূত নয় এমন গোষ্ঠীদেরও নিজেদের দলে যুক্ত করতে থাকেন। এসময় তার এক সময়ের সহযোগী ও রক্তভাই জামু খাঁ তীব্র বিরোধিতার পাশাপাশি যুদ্ধ ঘোষণা করে। মঙ্গোলরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়লে অনিবার্য হয় চারটি যুদ্ধ। প্রত্যেকটি যুদ্ধে জামু খাঁ পরাজিত হলে তার জেনারেলদের বড় বড় ডেগচিতে নিয়ে গরম পানিতে ফুটিয়ে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে জামু খাঁকে তার ইচ্ছানুযায়ী পিঠের হাড় ভেঙে হত্যা করা হয়।
১২০৬ সালের দিকে তেমুজিনের নেতৃত্বে মঙ্গোলরা পুরোপুরি সংঘবদ্ধ হয়। এই সময়ে তেমুজিনকে চেঙ্গিস খান উপাধি দেয়া হয়, যার অর্থ ‘সবার সম্রাট’। এরপরের দুই দশকে চেঙ্গিস খান জয় করেন পুরো বিশ্বের প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ বর্গ কিলোমিটারের বিস্তৃত ভূখণ্ড।
ধীরে ধীরে মঙ্গোল নেতা চেঙ্গিসের অধীনে আসে প্রায় পুরো চৈনিক ভূখণ্ড, খাওয়ারিজমের শাহ, পশ্চিম এশিয়ার তুর্কি গোত্রসমূহের অধিকৃত ভূমি আর ইউরোপের সীমারেখা। এমনকি সাইবেরিয়াতেও পরিচালিত হয় চেঙ্গিসের বিজয়াভিযান।
১২২৭ সালে পটল তোলার আগের ২১ বছরে তিনি ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে তুলে দেন বিজয়ের পতাকা। তবে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ আর পাশবিক হত্যাকাণ্ডের বাইরে তার এসব যুদ্ধ থেকে কোনো প্রাপ্তি ছিল না।
তার উত্তরাধিকারীরা কোরিয়ার পাশাপাশি আধিপত্য বিস্তার করে পোল্যান্ড পর্যন্ত। অর্থাৎ কাস্পিয়ান সাগর থেকে দজলা-ফোরাত তীরের ইরাক ও ইরান, রাশিয়ার দক্ষিণাংশ কিংবা জাপান সাগরের তীর- পুরোটাই ছিল তার অধিকারে।
তবে ১২৬০ সালের পর তাদের পতন শুরু হয়। ত্রিশ বছরের ব্যবধানে ১২৯০ সালে গিয়ে তাদের এই বিশাল সাম্রাজ্য ছত্রখান হয়ে ৪ ভাগে বিভক্ত হয়। ১২৯৪ সালের পর মঙ্গোল সাম্রাজ্য বলতে বোঝাত ইউয়ান সাম্রাজ্য, চাগতাই খানাত, গোল্ডেন হোর্ড আর ইলখানাত।
শুধুই যুদ্ধজয় আর রক্তপাত। চেঙ্গিসের বাহিনী সীমাহীন লুটতরাজ আর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দখলকৃত এলাকাগুলোয়। একটি এলাকা দখলের পর সব মানুষকে হত্যা করেই তাদের অভিযান শেষ হয়নি। এরপর তারা খুঁজে খুঁজে হত্যা করেছে তাদের গৃহপালিত সব পশুকে। মঙ্গোল বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে জানতেও আপনি আমাদের একটি ভিডিও দেখে নিতে পারেন। সেটার লিংকও দেয়া আছে এই ভিডিওর ডেসক্রিপশনে।
গোলায় থাকা খাবার যেমন তারা নষ্ট করেছে, সেই সঙ্গে জ্বালিয়ে দিত মাইলের পর মাইল ক্ষেতের ফসল। তবে অনেক এলাকা থেকে শিল্পী, কারিগর, আর কথিত বুদ্ধিজীবীদের কাজের বিনিময়ে জীবনের শর্ত দিয়ে ধরে আনা হয় মঙ্গোল রাজধানী কারাকোরামে।
চেঙ্গিসের অবর্তমানে ওগেদাই, গুয়ুক, মঙ্গু, কুবলাই,তোগোহান তিমুর খানরা তলোয়ার হাতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। তাদের তলোয়ারের সামনে একে একে ঝুঁকে পড়া রাজ্য আর শবদেহের স্তূপে পত পত করে উড়েছে মঙ্গোলদের পতাকা। তবে সেখানেই নিহিত ছিল তাদের পতনের সুর।
বিশেষত, চেঙ্গিস খান বেঁচে থাকতেই সাম্রাজ্যের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এত বিশাল সাম্রাজ্য কারো পক্ষে একা শাসন করা সম্ভব ছিল না। তিনি তাই পুরো মঙ্গোল সাম্রাজ্যকে চার ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন। একজন প্রধান খাকান নির্বাচন করে তার অধীনে রাখা হয়েছিল বাকিদের।
বিভাজিত মঙ্গোল সাম্রাজ্য থেকে চেঙ্গিস খানের বড় ছেলে যোচি মালিকানা পান গোল্ডেন হোর্ড তথা ককেশাস অঞ্চলের। চাগতাই খানের অধিকারে যায় বর্তমান কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও চীনের একাংশ। ওগেদাই খান তখন খাকান নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি বর্তমান সময়ের মঙ্গোলিয়ার অধিকারী হন। অধিকৃত পারস্য অঞ্চলের উপর আধিপত্য ছিল তুগলাই খানের।
চেঙ্গিস খানের বড় ছেলে যোচি খান বাবার সঙ্গে একই বছর ১২২৭ সালে মৃত্যুবরণ করে। তারই ছেলে বাতু খান এরপর থেকে গোল্ডেন হোর্ডের প্রধান নির্বাচিত হন।
সময়ের আবর্তে গোল্ডেন হোর্ড আর খাকানের লড়াই বাধার পথ তৈরি হয়। ১২৪১ সালে খাকান ওগেদাই খান মারা গেলে তার স্থলাভিষিক্ত হন মঙ্গু খান। গোল্ডেন হোর্ডের শাসক বাতু খানের মৃত্যুর পর তারই ছোট ভাই বারকি খান নির্বাচিত হন গোল্ডেন হোর্ডের অধিপতি।
রাজধানী কারাকোরাম যাওয়ার পথে বুখারায় এক বাণিজ্য কাফেলার গতিরোধ করে বদলে গিয়েছিল বারকি খানের জীবনের গতিপথ। জনৈক সুফি সাধক সাইফুদ্দীনের প্রভাবে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
১২৫৮ সালে হালাকু বাগদাদ ধ্বংস করলে নব্য মুসলিম বারকির সঙ্গে তার সংঘাত অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়। এর মাত্র দুই বছরের মধ্যে ১২৬০ সালে প্রথমবারের মতো আইন জালুতের যুদ্ধে পরাজিত হয় মঙ্গোলরা। এর সমান্তরালে চলছিল খাকান নির্বাচনের ঠাণ্ডা লড়াই।
হালাকু খান কুবলাই খানকে সমর্থন দিলে আরিক বুকার পক্ষ নেন বারকি খান। ফলে তাদের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ বেধে যায় আরিক বুকা আর কুবলাই খানের মধ্যে। ওদিকে বারকি খানের সঙ্গে লড়াই বাধে হালাকু খানের। নুগাইর খান হালাকুকে প্রায় পর্যুদস্ত করে ছাড়েন। ফলে আরিক বুকা কুবলাই দ্বৈরথের সঙ্গে সঙ্গে সমান্তরালে চলমান বারকি-হালাকু সংঘাত মোঙ্গলদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে।
খাকান হওয়ার দ্বন্দ্বে আরিক বুকার সঙ্গে কুবলাই জয়ী হলেও ওগেদাইয়ের উত্তরসূরীরা এবার দাবি নিয়ে দৃশ্যপটে উপস্থিত হয়। ফলে লেজে-গোবরে অবস্থা হয় মঙ্গোলদের। গোল্ডেন হোর্ড, ইলখানাত, চাগতাই খানাত আর ইউয়ান নিয়ে চারভাগে বিভক্ত মঙ্গোল সাম্রাজ্য অল্পদিনের মধ্যে হালাকু খান, বারকি খান, আবাকা খান আর কুবালাই খানের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করে।
ওদিকে রুকনুদ্দিন বাইবার্সের নেতৃত্বে প্রবল প্রতাপশালী হয়ে ওঠে মিসরের মামলুকরা। ফলে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও প্রধান শাসকদের মৃত্যুতে অভিভাবকশূন্য মঙ্গোলরা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। শেষ অবধি মুসলিম অধীনে থাকা গোল্ডেন হোর্ড ঢিমেতালে তাদের শাসন টিকিয়ে রাখে ১৫ শতক অবধি।
তাই মঙ্গোল সাম্রাজ্যের পতনের মূল কারণ হিসেবে অনেকে শুধুই বারকি খানকে যেভাবে দাবি করে তা পুরোপুরি সঠিক নয়। এক্ষেত্রে মিসরের কুশলী যোদ্ধা ও নেতা রুকনুদ্দিন বাইবার্সের ভূমিকাও অনেক। তবে ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগে তারা পৃথিবীর বাতাসে লাশের গন্ধ মেখে হরর মুভির চিত্রায়ন ঘটায় চারপাশে।
নানা ভূখণ্ডের মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখে শিউরে উঠেছিল মানবতা। মঙ্গোল আক্রমণের সেই রক্তাক্ত সময় আর মাটিতে লেগে থাকা রক্তের দাগ ইতিহাসকে দেয় নতুন পথের দিশা। কারণ সেই রক্তমাখা মাটি স্পর্শ করেই অনেক বীর যোদ্ধা সাহসে বুক বেঁধেছিল। তারা পদঘাতে জীর্ণ জীবনের স্বাদ ভুলে গিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে হলেও স্বাধীন করতে চেয়েছিল নিজ নিজ মাতৃভূমি। হয়তো সেজন্যই হঠাৎ উত্থিত হয়ে পৃথিবী জুড়ে তাণ্ডব ঘটানো মোঙ্গলরা ধীরে ধীরে যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে অনেকটা অগোচরেই।