অভিশপ্ত পম্পেইয়ের যৌনজীবন নিয়ে আমাদের ভিডিও দেখুন
আর্টিকেলটি পড়ুন
কারও মতে স্থাপত্য, শিল্পকলা আর সভ্যতার অনন্য নিদর্শন; কেউ কেউ মনে করেন, এ আর কিছুই না, নগ্নতা, অশ্লীলতা আর উগ্র যৌনতাকে বাস্তবে ফুটিয়ে তোলার ব্যর্থ চেষ্টা। সীমাহীন কামনা-বাসনা আর লালায়িত লালসা তুলে ধরতে কখনও সেখানে অবলম্বন হয়েছিল ইট-পাথর, কখনও মানুষের অবদমিত যৌনতা অদ্ভুতরূপে ভাষা খুঁজেছে ক্যানভাসের দ্বিমাত্রিকতায়। আর এই কথা যদি এক লাইনে পরিচয় করে দিতে হয়, তবে সেটা ‘পম্পেই’।
গল্পটা আজ থেকে প্রায় ২,০০০ বছর আগের। ভয়াবহ আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াসের লাভার নিচে চাপা পড়ে গেল বিরাট শহর পম্পেই। কিন্ত এই অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ইতিহাসের জন্য রচনা করেছে এক মৃত্যুর শীতলতা নিয়ে লেখা ছোটগল্পের। লাভাস্রোতে চাপা পড়েও সব শেষ হয়নি, বরঞ্চ হাজার বছরের জন্য কালের সাক্ষী হয়ে টিকে গেছে পুরো একটি শহর।
প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকরা আধুনিক নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন পম্পেইয়ে। তাদের নিরলস শ্রমের ফসল হিসেবে ধীরে ধীরে জানা গিয়েছে হারিয়ে যাওয়া পম্পেই সম্পর্কে অনেক অমূল্য তথ্য। আর সেসব তথ্য আমাদের সামনে যে রোমান শহরের গল্প বলছে, সেটা কোনো সাধারণ নগরের মতো ছিল না। একে আপনারা তুলনা করতে পারেন বর্তমান বিশ্বের কোনো গুরুত্বপূর্ণ অবকাশযাপনকেন্দ্র, যেমন- লাস ভেগাস, মায়ামি, দুবাই, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আমস্টারডাম কিংবা মরিশাসের সঙ্গে। স্পষ্ট করে বললে, যেখানে সবকিছু সাজানো হয়েছিল শুধু জীবনকে ভোগ করার জন্যই।
প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকরা আবিষ্কৃত তথ্যসূত্রের আলোকে দেখিয়েছেন পম্পেইয়ের যৌনজীবনের নানা আঙ্গিক। তাদের মতে, হাজারবিশেক মানুষের এই শহরে ছিল প্রায় ৩৫টির মতো লুপনার তথা বেশ্যালয়।
বর্তমানে বিভিন্ন শহরে যেমন গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়, তেমনি সেটাকে সামনে রেখে লুপনারের ব্যাখ্যা দেওয়াই যায়। এসব লুপনারে আসলে মানুষ ঝাঁকে ঝাঁকে হাজির হতো পরিপূর্ণ যৌনসুখ লাভের স্বপ্ন নিয়ে। আর সেদিক থেকে বলতে গেলে, এই লুপনার হচ্ছে গণ-যৌনমিলনাগার। হয়তো এই বিষয় সামনে রেখেই ব্রায়ান লু সুন হুয়া বলেই বসেছেন, ‘In Ancient Pompeii, Sex Was Power’।
ব্রায়ানের বর্ণনা থেকেই খোঁজা যাক লুপনার হয়ে ওঠার ইতিহাস। পম্পেই তথা প্রাচীন রোমের ভাষা লাতিনে একজন বেশ্যাকে ডাকাত হতো ’লুপা’, যার অর্থ ‘মাদী নেকড়ে’। আর তার সঙ্গে মিল রেখেই ব্রোথেল তথা বেশ্যালয়কে নাম দেওয়া হয়েছিল ‘লুপনার’ তথা ‘নেকড়ের ঘর’।
রোমের বেশিরভাগ শহরের মতো পম্পেই শহরে গড়ে উঠেছিল অগণিত বেশ্যালয়। ধারণা করা হয়, এর সংখ্যা ছিল ৩৫। তবে অনেক গবেষক এই সংখ্যা ৪৫ কিংবা তদুর্ধ্ব বলেও দাবি করেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে আবিষ্কৃত একটি বিশালাকৃতির লুপনারকে বলা হচ্ছে ‘লুপনারে গ্রান্দে’ (Lupanare Grande) তথা বড় বেশ্যালয়। এর মূল আকর্ষণ হিসেবে এখনও প্রায় অক্ষত অবস্থায় টিকে আছে অগণিত যৌনক্রিয়ার আর নগ্ন নারী-পুরুষের গ্রাফিতি। সেই সঙ্গে এর নানা করিডোরে বসানো যৌনোত্তেজক রিলিফ ভাস্কর্যও কামুক দর্শনার্থীদের দৃষ্টিকেন্দ্রে ঠাঁই নেয়।
চারপাশে সাজানো সারি সারি মনুষ্যলিঙ্গের ভাস্কর্যের ছড়াছড়ি। এরই মধ্যে দৃষ্টি দেয়ালে গেলে সেখানেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যৌনমিলনের দৃশ্য। এর মূল কারণ গ্রিকদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পম্পেইতেও মানুষের লিঙ্গকে মনে করা হতো উর্বরতার প্রতীক। ২০১৭ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি লেখায় এই দাবি করেছেন জিওফ্রে স্টোন (Geoffrey R. Stone)। তিনি কোনো ভনিতা না করে সরাসরি বলেছেন “To the contrary, the phallus was a potent symbol of fertility, a central theme in Greek religion.”।
পম্পেই নগরীর ভাস্কর্যগুলোতে যে যৌনতার বহিঃপ্রকাশ, তার দার্শনিক তত্ত্ব খুঁজেছেন মেইলান সোলি (Meilan Solly)। তিনি স্মিথসোনিয়ান জার্নালে প্রকাশিত তার Why Was Erotic Art So Popular in Ancient Pompeii? শীর্ষক প্রবন্ধে পুরো বিষয়টির ময়নাতদন্তের চেষ্টা করেছেন।
মেইলান মনে করেন, পম্পেইয়ের শিল্পকর্মগুলো ১৯ শতকে এসে অনেককে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দিচ্ছে। তার মতে, এদিক থেকে সেদিক যেদিকেই তাকানো যাক, একইরকম যৌনোত্তেজক শিল্পকর্ম মুখব্যাদান করে আছে। দেয়ালের ফ্রেস্কোগুলোতে যেখানে তীব্র কামোদ্দীপনায় উন্মাদ যুগলের প্রতিকৃতি। সেখান থেকে একটু নিচে দৃষ্টি দিলেই চোখ পড়ে যায় উদোম শরীরের লিঙ্গোত্থিত পুরুষের প্রতিকৃতি। তারা নাকি এগুলোকে দেবতাজ্ঞান করতো পম্পেইয়ের দিনগুলোতে।
পম্পেইয়ের যৌনোত্তেজক শিল্পকর্মগুলো একসময় মানুষের সামনে প্রকাশযোগ্য বলে মনে করেনি নাপোলির জাদুঘর কর্তৃপক্ষ (Museo Archeologico Nazionale di Napoli)। তারা এগুলোকে অতীত সংস্কৃতির নিদর্শন হিসেবে প্রদর্শনীতে না দিয়ে গোপন একটি কক্ষে লুকিয়ে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।
অ্যাটলাস অবস্কিউরা (Atlas Obscura)-তে প্রকাশিত নিবন্ধে গ্যাবিনেট্টো সেগ্রেটো (Gabinetto Segreto) লিখেছেন, শুধুমাত্র গবেষক এবং পুরুষ দর্শনার্থীরা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে উপযুক্ত অর্থ উৎকোচ দিয়ে তবেই এগুলো দেখতে পারতেন। আর এজন্যই ১৮৪৯ থেকে ২০০০ সাল অবধি প্রায় দেড়শ বছর পম্পেইয়ের এসব শিল্পকর্ম থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে।
পুরো পরিস্থিতি বদলে যায় আর্কিওলজিক্যাল পার্ক অব পম্পেইয়ের (Archaeological Park of Pompeii) Art and Sensuality in the Houses of Pompeii” শীর্ষক প্রদর্শনী শুরুর পর থেকেই। এ সময় মানুষ জানতে পারে প্রাচীন রোমের যৌনজীবনের বিবিধ কমনীয়, মোহনীয়, আকর্ষণীয় অধ্যায়ের পাশাপাশি জঘন্য পাশবিক দিকগুলোও।
আর্কিওলজিক্যাল পার্ক অব পম্পেইতে লিডা ও রাজহাঁসের (Fresco of Leda and the swan) যে ফ্রেস্কো রয়েছে, তা এক অর্থে এই সময়ের একটা সিগনেচার শিল্পকর্ম বলা যায়। ২০১৮ সালে আবিষ্কৃত এই ফ্রেস্কোতে দেখা যায় দেবতা জিউস রাজহাঁসের ছদ্মবেশে স্পার্টার রানী লিডাকে সঙ্গমে প্রলুব্ধকরণ কিংবা ধর্ষণের চেষ্টা করছে। উপকথা থেকে জানা যায়, লিডা দুটি ডিম পেড়েছিল। এই ডিম ফুটে বের হয় পোলাক্স ও হেলেন নামের দুটি শিশু। এরপর বাকি গল্পগুলোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় ভয়াবহ সেই ট্রোজান যুদ্ধকে।
বিশ্বের সবাই যৌনতাকে একান্ত ব্যক্তিগত এবং গোপনীয় মনে করলেও পম্পেই চলেছিল উল্টো পথে। তারা সরাইখানা থেকে শুরু করে স্নানাগার, খাবার হোটেল কিংবা বেশ্যালয়ের দেয়ালে কোনো পার্থক্য রাখেনি। সবখানেই ঘুরে ফিরে অজস্র নগ্নচিত্র, উত্থিত লিঙ্গসহ পুরুষ প্রতিকৃতি, শুধুই দণ্ডায়মান লিঙ্গ কিংবা সরাসরি সঙ্গমের দৃশ্যের বাইরে তাদের চিন্তাজগতে আর কিছু হয়তো তখন দোলা দেয়নি।
রাজহাঁস আর লিডা থেকে প্রায়াপাসের ফ্রেস্কোতে (fresco of Priapus) দৃষ্টি দেওয়া যাক। এখানেও সেই একই দৃশ্যের পুনর্মঞ্চায়ন।
সবখানেই এমন যৌনতার ছড়াছড়ি। আর সেগুলো নিয়ে তাদের গর্বের শেষ নেই। পম্পেই আর্কিওলজিক্যাল পার্কের দায়িত্বে থাকা গ্যাব্রিয়েল (Gabriel Zuchtriegel) কিংবা মারিয়া (Maria Luisa Catoni) প্রত্যেকেই এগুলোকে নিয়ে অনেক গর্বভরা বক্তব্য দিয়েছেন লন্ডন টাইমসে। তাদের মতে, বহু আগে যখন মানুষের পুরো চিন্তা গিয়ে ঘুরপাক খেতো শুধুই ভোগবিলাসকে ঘিরে, তখনকার সমৃদ্ধ ইতিহাসই চিত্রিত হয়েছে এসব শিল্পকর্মে। এগুলো প্রকৃতির মতোই খোলামেলা, তাই তা নিয়ে লজ্জিত হওয়া কিছু নাই।
জিওফ্রে স্টোন ২০১৭ সালে যা লিখেছেন তার সারবস্তুও হচ্ছে ‘নগ্নতাই অশ্লীলতা নয়’ । কারণ তিনি তার Sex and the Constitution তে সরাসরি লিখেই দিয়েছেন ‘To the contrary, the phallus was a potent symbol of fertility, a central theme in Greek religion.”।
পম্পেই আর্কিওলজিক্যাল পার্কের পরিচালক হয়তো এজন্যই কোনো ভনিতা না করেই বলেছেন, পম্পেইয়ের মানুষ এই ধরনের কামনির্ভর চিত্রকলার বহুল ব্যবহার করেছে। এটা বাস্তবে সেই সমাজ ছিল যেখানে যৌনতা ও সঙ্গম এমন কিছু ছিল না যা শুধুই ব্যক্তিগত পরিসরে মানুষ উপভোগ করতে পারে।
পম্পেইয়ের বেশ্যালয়গুলো কিভাবে পরিচালিত হতো? সেখানে কারা আসতো? পম্পেইয়ের ‘লুপনারে গ্রান্দে’ (Lupanare Grande) তথা বড় বেশ্যালয়ে মোট কক্ষ ছিল দশটি। এগুলোতে সরাসরি পাথরের তৈরি চৌকি ধাঁচের উচু স্থানে মাদুর বিছানো থাকত।
বর্তমানের সঙ্গে তুলনা দিলে এই ঘুপচি ঘর কিংবা তার খরখরে পাথরের মেঝেকে যাচ্ছেতাই মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্ত এর দেয়ালে আঁকা ফ্রেস্কোগুলো সরাসরি যেকোনো পর্নোগ্রাফিকেও হার মানায়। এগুলো মূলত খদ্দের ধরার জন্য বেশ্যালয়ের তৈরি বিজ্ঞাপন।
মনে করা হয়, লুপনারের বেশিরভাগ বেশ্যাকে কৃতদাস হিসেবে বিশ্বের নানা এলাকা থেকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল। এর বাইরে অনেক বালকও বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য হয়েছিল, যারা ছিল ঘেটুপুত্র। এগুলো সেই সমাজে সমকামিতার প্রচলনের কথা জানান দেয়।
শহরের প্রায় পুরোটা জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা লুপনারে যারা যৌনকর্মের জন্য যেত, তাদের আর্থিক সামর্থ্য তেমন না থাকায় বেশ্যাদের আয়-রোজগার খুব একটা আহামরি ছিল না। অন্যদিকে, তৎকালীন সমাজের ধনীদের ছিল ব্যক্তিগত যৌনদাসী। আর এজন্য তাদের কাছে বেশ্যাদের তেমন প্রয়োজন ছিল না। তাই অনেকক্ষেত্রে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত দাস কিংবা সাপ্তাহিক ছুটিতে থাকা দাসরাও গিয়ে হামলে পড়তো এসব বেশ্যালয়ে। তাদের ক্ষেত্রে যৌনতার বিনিময় ছিল মাত্র এক টুকরো রুটি কিংবা একবেলার আহার।
পুরোপুরি পিতৃতান্ত্রিক আবহে পরিচালিত রোমান সমাজের যৌনতাতেও পুরুষের আধিপত্য ছিল দৃশ্যমান। রোমান নারীরা খুব কমক্ষেত্রে তাদের স্বামী নির্বাচনের সুযোগ পেতেন। তাদের জন্য বিবাহবহির্ভূত যৌনতা ছিল কল্পনার বাইরে। অনেক নারীকে এই কাজে ধরা পড়ার কারণে প্রাণ দিয়ে পাপের প্রায়শ্চিত্য করতে হয়েছে।
বয়োপ্রাপ্তির পর তাদের একমাত্র দায়িত্ব ছিল যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে করে ধারাবাহিক গর্ভধারণের মাধ্যমে যত বেশি সংখ্যক পুরুষ সন্তানের জন্ম দেয়া, যারা যোদ্ধা হিসেবে রোমান সমাজে সমাদৃত হবে। আর এজন্য অবশ্যই বিয়ের রাত অবধি তাদের কুমারী থাকা জরুরি ছিল। বিয়ের পর একমাত্র যৌনসঙ্গী হিসেবে তাদের স্বামীর বাইরে অন্য কারো সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ ছিল না।
রোমান পুরুষদের যৌনতার ক্ষেত্রে পুরো স্বাধীনতা ছিল। তারা বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত যা-ই হোক, সব রকমের যৌনকর্মের অধিকার ভোগ করতো। বেশিরভাগ ধনী পুরুষের ছিল অগণিত যৌনদাসী। পাশাপাশি সদলবলে তারাও গিয়ে বিভিন্ন অভিজাত বেশ্যালয়ে হানা দিতো। তবে বিবাহিত স্ত্রী আর দাসদাসীদের বাইরে কোনো মুক্ত তথা অভিজাত ঘরের নারী কিংবা বালক ঘেটুপুত্রের সঙ্গে যৌনসঙ্গম পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল পুরুষদের জন্য।
প্রাচীন রোমের পুরুষরা নারী কিংবা পুরুষ যে কারো সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারতো। তবে স্ত্রীর বাইরে তারা যেসব যৌনদাস কিংবা দাসীর পাশাপাশি বেশ্যাদের সঙ্গে সঙ্গম করতো, সেটাকে ঐ সমাজে অশ্লীলতা মনে করা হতো না।
প্রাচীন রোমে কিছু নিয়ম মেনে সমকামিতার প্রচলন ছিল। দাসদের বাইরে কোনো স্বাধীন রোমান পুরুষ নাগরিকের পায়ুপথে সঙ্গমের অনুমতি ছিল না। তবে তারা নিজে চাইলে সহজেই কোনো দাসের পায়ুপথে সঙ্গম করার পাশাপাশি কর্তৃত্বপরায়ণ যৌনতায় লিপ্ত হতে পারতো।
নারীদের ক্ষেত্রে সমকামিতায় লিপ্ত হওয়ার সুযোগ ছিল তুলনামূলক কম। কারণ দাসদের বাইরে মুক্ত স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠা রোমান নারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল বিয়ের পর যত বেশি সংখ্যক শক্তিশালী ও সামর্থ্যবান পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়া। আর সেই হিসেবে তারা লেসবিয়ানিজমে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। অন্যদিকে কারও কারও ক্ষেত্রে চুপিসারে এই ঘটনা ঘটলেও সবাই বিষয়টিকে ঘৃণা করতেন।
বিবাহিত কোনো রোমান নারী যদি পরকীয়া করতে গিয়ে ধরা পড়তেন, তাহলে সেই নারী এবং তার প্রেমিককে হত্যা করার দায়িত্ব বর্তাতো তার বাবার প্রতি। বাবা যদি একজনকেও হত্যা করতে ব্যর্থ হতো, তবে সেই বাবাকেই খুনের আসামী হিসেবে সাজা দেওয়া হতো।
মুক্ত, স্বাধীনভাবে জন্ম নেওয়া কোনো রোমান নারী যদি নিচু জাতের কোনো ব্যক্তি, দাস কিংবা সাজাপ্রাপ্ত আসামি, বেশ্যা, কিংবা গ্ল্যাডিয়েটরের সঙ্গে যৌনকর্মে ধরা পড়তো, তাহলে তার স্বামী চাইলে স্ত্রীর প্রেমিককে সরাসরি হত্যা করতে পারতো। তাকে তার স্ত্রীকে খুন করার অনুমতি দেওয়া না হলেও তালাক দেওয়ার নিয়ম ছিল তিন দিনের মধ্যে। এই সময়ে সে চাইলে তার স্ত্রীকে বেত্রাঘাত, অঙ্গহানি, সীমাহীন মারধোর, এমনকি আগুনের ছেঁকা দেওয়ার অনুমতিও ছিল রোমান সমাজে। রোমান সমাজের এই জঘন্য রীতিগুলো পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছিল স্প্যানিশ ইনকুইজিশনের বর্বরতায়।
যৌনতা কিংবা স্বাভাবিক জীবন, দুটি ক্ষেত্রেই ক্ষমতার কাছে মাথা নুইয়ে চলতো পম্পেই। নিয়মকানুন কিংবা সামাজিক রীতি বলতে যা ছিল, তার পুরোটাই ছিল ভণ্ডামি। তবে তারা প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়েছিল বলেই উন্নত স্নানাগার, পয়ঃপ্রণালী, সুন্দর প্রশস্ত রাস্তা এবং অভিজাত স্থাপত্য নির্মাণ করতে পেরেছিল। তারা অর্থ ও ক্ষমতার বলে একজন দাসকে পশুর মতো তার দৈনন্দিন কাজ ও যৌনকর্মে ব্যবহার করতে পারতো।
পম্পেইয়ের জীবন বলতে যা ছিল, তার পুরোটাই উপভোগ করতে পারতো মুক্তভাবে জন্ম নেওয়া পুরুষ নাগরিকরা। যার বিপরীতে মুক্তভাবে জন্ম নেওয়া নারী, দাসী কিংবা বেশ্যাবৃত্তিতে থাকা নারীদের জীবনের মাঝে বিশেষ পার্থক্য ছিল না। কারণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা আইনগত অধিকারের যা ছিল, তার সবাই নির্ধারিত থাকতো মুক্ত, স্বাধীন পুরুষদের জন্য।
রোমানদের পরস্পরমুখী যাপিত জীবনের বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে যৌনতার ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে অভিন্ন রীতি। আর এখানে সংমিশ্রণ ঘটেছিল গৌরব ও অপমান, পরিচ্ছন্নতা ও নোংরামি আর তার বাইরে সভ্যতা-বর্বরতা মিলেমিশে হয়েছিল একাকার। তবে তাদের সমাজে অশ্লীলতা এবং ভদ্রতার সীমারেখাকে খুব কাছাকাছি নিয়ে আসায় শিল্প, সংস্কৃতি আর সৃষ্টিশীলতার প্রায় সবটা জুড়ে ঠাঁই নিয়েছিল শুধুই যৌনতা। পম্পেইয়ের শিল্পকর্মগুলো দেখলে মনেই হয় না যে একমাত্র রতিক্রিয়ার বাইরে প্রাচীন রোমের মানুষের অন্য কোনো কাজ ছিল!